চার বছরেও জানা গেল না মিতু কেন খুন হলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চার বছর আগে ৫ জুন নগরের জিইসি মোড়ে গুলি এবং ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দেয়া হয়নি চার্জশিট। গত জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিষয়টি স্বীকার করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দীন বলেন, ‘মিতু হত্যার মামলার ডকেট বুঝে পেয়েছি। তদন্ত চলছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ওই দিনই স্বামী তৎকালীন পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দ্রুত এ মামলার চার্জশিট দেয়ার দাবি জানান। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে অভিযোগ করে সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাবুল আক্তারই তার মেয়ের খুনি। কক্সবাজারে কর্মরত থাকা অবস্থায় গায়িত্রী নামে এক এনজিও কর্মীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল বাবুল আক্তার। এ নিয়ে মিতুর সাথে দাম্পত্য কলহের জেরে কথিত সোর্স মুছাকে দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে বাবুল আক্তার।’ তবে এ মামলার চার্জশিট দ্রুত দেওয়া হোক সেটি চান বাদি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারও।
এ বিষয়ে নগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলাটি আদালতের আদেশে তদন্ত করছে পিবিআই। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’
একই কথা বলেছেন মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন এডিসি কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা এখন পিবিআই। বিষয়টি তারা দেখবে। আমার কাজও শেষ পর্যায়ে ছিল। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
দায়িত্ব পেয়ে গত জানুয়ারি মাস থেকে মামলার শেষভাগের তদন্তকাজ চলছে বলে জানিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দীন বলেন, আমরা পলাতক এক আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। অভিযান অব্যাহত আছে।
সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, মিতু হত্যা মামলাটি এতবেশী স্পর্শকাতর যে এটির দায় কেউ নিতে চায় না কেউ। সাবেক আইজিপি শহীদুল ইসলামের আমলেও এ মামলার তদন্তকাজ থমকে ছিল। সাবেক আইজিপি জাবেদ পাঠোয়ারির আমলেও এ মামলার তদন্ত নিয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে বর্তমান আইজিপি বেনজির আহমেদের আমলে চার্জশিট দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সিএমপির এ কর্মকর্তা।
আগের তদন্ত সংস্থা নগর ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ। আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল ডিবির। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের জবানবন্দিতে খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে যে মুছা শিকদারের নাম ওঠে এসেছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি ডিবি। এখন পিবিআই সেই মুছার খোঁজ পায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ তাকে পেলেই মিতু খুনের কিনারা হবে।
হত্যাকা-ের পর শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জামাতা বাবুল আক্তারের পক্ষে কথা বললেও পরে মেয়ের হত্যার পেছনে বাবুলের ‘পরকীয়া সম্পর্কের’ সন্দেহের ইঙ্গিত করে তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে তিনি এসব দাবি জানানোর পাশাপাশি ওই সময় সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে কক্সবাজারের এনজিও কর্মী গায়ত্রী সিং ও রাজধানীর বনানীর বিনতে বসির বর্ণি নামে দুই নারীর সম্পর্কের কথা বলেছিলেন তিনি। তবে সেসময় উল্টো শ্বশুরপক্ষ তাকে ঘায়েল করতে চাচ্ছেন অভিযোগ করে সঠিক তদন্তেই হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলে দাবি করেছিলেন বাবুল আক্তার।