চসিকের প্রশাসক নিয়ে নগরবাসীর কৌতূহল

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে সবাই#

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক কে হচ্ছেন তা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। প্রশাসক নির্বাচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশাসক হিসেবে বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে বেচে নেবেন নাকি নতুন মুখ নিয়ে আসবেন তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে নগরবাসীর মধ্যে।
সরকারি কোনো কর্মকর্তা কিংবা প্রশাসনের বাইরের কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে চসিকের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ধারণা করতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী চসিকের প্রশাসক হিসেবে কাকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। হয়তো আগামী সপ্তাহের মধ্যে চসিকের প্রশাসক নিয়োগ হয়ে যাবে।
চসিকের বর্তমান নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ আগস্ট। গত ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২১ মার্চ ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
স্থগিত হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে প্রার্থী হন ডা. শাহাদাত হোসেন। অন্য দলের আরো পাঁচজন মেয়র প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৫৫টি পদে ২৬৯ প্রার্থী ছিলেন।
স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) ২০০৯-এ বলা হয়েছে, করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারীর পাশাপাশি অতি বর্ষণ ও পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৫ আগস্টের মধ্যে আটকে থাকা চসিকের ভোট করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চসিকে আইনানুগভাবে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ এ বলা হয়েছে, ‘কোনো সিটি কর্পোরেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হইলে, সরকার, সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে।’
চসিকের বর্তমান নির্বাচিত পরিষদের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৫ সালের ৬ অগাস্ট। সে হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করছেন, মেয়র পদে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া ও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন যে মেরুকরণ চলছে সে প্রেক্ষাপটে প্রশাসক পদে নতুন মুখ আসতে পারে। আবার অনেকে বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে মেয়র আ জ ম নাছির যে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন তা বিবেচনায় প্রশাসক হিসেবে তাকে বেচে নেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রশাসক পদে সরকারের ভেতর থেকে কিংবা বাইরের থেকে উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়রের দায়িত্ব চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না। ২-৩ মাসের জন্য আহামরি কিছু হয়ে যাবে না। প্রশাসক পদে নতুন মুখ আসলে নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার কোনো যুক্তি দেখছি না। আজ হোক, কাল হোক নির্বাচন তো হবেই।
চসিকের কাউন্সিলরদের অনেকে মনে করছেন, নতুন কেউ প্রশাসক হলে করপোরেশনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হবে ও নাগরিক সেবা ব্যাহত হবে। বর্তমান নির্বাচিত পরিষদকে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে দায়িত্ব দেওয়া হলে নগরবাসী উপকৃত হবে বলে মনে করছেন তারা।
চসিকের প্যানেল মেয়র ও নগরীর দেওয়ানবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণকে এখন যেভাবে নাগরিক সেবা দিচ্ছি, প্রশাসক আসলে তারা এভাবে সেবা পাবেন না। কারণ প্রশাসক নির্বাচিত নয় বিধায় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন না।
এদিকে পুরনো তফসিলে চসিক নির্বাচন হতে হলে ৫ আগস্টের পর তিন মাসের মধ্যে ভোট করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। অন্যথায় তিন মাস পর নতুন তফসিলে ভোট হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
নির্বাচনের সিডিউলের বিষয়টি মাথায় রেখে তিন মাস কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী সময়ের জন্য প্রশাসক বাছাই করা হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা। তিনি বলেন, সামনে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা কেউ বলতে পারে না। যদি তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার সুযোগ থাকে তাহলে হয়তো প্রশাসক হিসেবে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আর যদি তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের পরিস্থিতি না থাকে তাহলে প্রশাসনের বাইরে কোনো রাজনৈতিক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করা হতে পারে।