চসিককে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে

সুপ্রভাত বাংলাদেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে প্রতিবেদকের রাজস্ব ঘাটতি পূরণের লক্ষ্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে অবস্থিত বন্দরÑকাস্টমস সরকারকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেয়। এখন এই নগরের উন্নয়নের জন্য তারা তাদের রাজস্বের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জও যদি সিটি করপোরেশনকে দেয় তাহলে এ সংস্থার কোনো আর্থিক সংকট থাকবে না’। তিনি বলেন, ‘আমি সেটাই বাস্তবায়ন করতে চাইছি’।
১৮০ দিনের জন্য প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে খোরশেদ আলম সুজন অর্ধেক সময় পার করেছেন। এর মধ্যে তাঁর বেশ কিছু উদ্যোগ নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ জন্য তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার কথা স্মরণ না করলেই নয়। অন্তর্বর্তীকালের জন্য দায়িত্ব নিলেও তিনি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান বা এমন কাজের সূচনা করে যেতে চান যা তার পরবর্তী নির্বাচিত মেয়ররা এসে বাস্তবায়ন করার সুযোগ ও উৎসাহ পান। এমন একটি বক্তব্য তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন। কার্যত তিনি তেমন প্রচেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের ৮৫ শতাংশের অধিক আমদানিÑরপ্তানি হয় এই বন্দরের মাধ্যমে। ফলে রাজস্ব খাতে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি বিশাল অবদান আছে। এই বন্দর সিটি করপোরেশন এলাকাধীনে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক এই বন্দরে আসাÑযাওয়া করে। এরমধ্যে ট্রেলারের মতো ভারী যানবাহনও থাকে। এই বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে চসিক নির্মিত সড়কে। যে সব সড়কে বন্দরমুখী বা বন্দর সংশ্লিষ্ট যানবাহন চলাচল করে সেসব সড়ক খুব তাড়াতাড়ি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং তা খুব দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন হয়। সাধারণত সিটি করপোরেশন যে সড়ক নির্মাণ করে তা সাধারণ গণপরিবহনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। এমন সড়কে মালবাহী ভারী যানবাহন চলার খেসারত দিতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অসচ্ছলতায় ভুগছে। যে কারণে অনেক উন্নয়নকাজও করা সম্ভব হয় না। গতকালই চট্টগ্রামের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় সিটি করপোরেশনের আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যার একটিতে বলা হয়েছে টাকার অভাবে সিটি করপোরেশন তাদের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে অপারগ হয়ে উঠছে। অন্য পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিটি করপোরেশন পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোরই চিকিৎসা প্রয়োজন। অবশ্য ইতোমধ্যে এই সংকট কাটাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছে সিটি করপোরেশন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক দৈন্যের চেহারাটি দিনদিন প্রকট হয়ে উঠছে। আমরা জানি না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রতিষ্ঠান তার ন্যায্য পাওনা পায় কি না। তবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পাওয়ার উচিত সরকার থেকে তা পাওয়া যায় না। কাজেই সিটি করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা প্রকার উদ্যোগের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। তারমধ্যে বন্দর ও কাস্টমসের আয় থেকে সিটি করপোরেশনকে যদি সার্ভিস চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা হয় তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকট কিছুটা কাটবে। সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এমন সার্ভিস চার্জ পাওয়ার দাবি করতেই পারে।