চলবে গণপরিবহন : স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সবধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে

৩১ মে শেষ হচ্ছে সরকারি ছুটি। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করবে। যদিও সরকারের জরুরি সেবার অধীনে কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এতদিন খোলাই ছিল। জুলাইয়ের প্রথম থেকে সীমিতভাবে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ট্রেন, বাস, স্টিমার চালু করার পাশাপাশি যাতায়াতের সময় কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায় সে বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করতে গেলে সীমিত যাত্রী পরিবহন করতে হবে বলে ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পরিবহন মালিকরা। তার পাশাপাশি পথিমধ্যে যাত্রী না তোলার শর্ত থাকায় দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়া শহরের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী সেবা কীভাবে দেওয়া হবে তা নিয়েও বিপত্তি তৈরি হয়েছে।

নৌযানগুলোতে কেবিন ছাড়া সাধারণ ডেকে দীর্ঘক্ষণ কীভাবে ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহন করা যাবে তা নিয়েও জটিলতা আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু আন্তঃনগর ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেসঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। যা হোক এসব জটিলতা খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং গণপরিবহনে যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করা হবে।

মোটকথা দেশকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। ২৫  মার্চ থেকে ঘোষিত বন্ধ ৩১ মে থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন ও নির্মাণশ্রমিকদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি সবকিছু খুলে দেওয়ার দাবি থাকলেও দেশের স্বাস্থ্য বিশারদগণ সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, এতে দেশে সংক্রমণের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে দেশে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে এবং তাতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এর বিপরীতচিত্রও স্বস্তিকর নয়। কারণ লাগাতারভাবে সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এরই মধ্যে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপের পর্যায়ে যাবে। জাতিসংঘসহ নানা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও বেশ কিছু দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশও দীর্ঘদিন লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে পারবে না। দেশের অর্থনীতির কথা ভেবে, ভবিষ্যতে মানুষের নিরাপত্তা ও জীবিকা চালু রাখার লক্ষ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই। কর্মক্ষেত্রসহ যাতায়াতকালে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করতে হবে।  যতদূর পারা যায় ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। অর্থাৎ নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। জীবন বাঁচাতে জীবিকা এবং সে জীবিকার কারণে সকল পর্যায়ে নিজেদের নিরাপদ রেখে চলাচল করা ছাড়া আপাতত কোনো উপায়ও নেই আমাদের।