চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা সেবা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে

ডা. শাকিল ও ডা. হাসান শাহরিয়ার করোনায় আক্রান্তের পর, ডা. অসীম স্ট্রোক করে মেডিক্যাল আইসিইউতে ভর্তি
ভূঁইয়া নজরুল :

ডাক্তার শাকিল আহমেদ, ডাক্তার হাসান শাহরিয়ার কবির ও ডাক্তার অসীম কুমার নাথ। তিনজনই চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছিলেন। এখন এই তিনজনের দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেসনে রয়েছেন একজন স্ট্রোক করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতিে চিকিৎসাধীন। তাহলে আগামীর করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সমন্বয় কিভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য প্রশাসন।

শুধু স্বাস্থ্য প্রশাসন নয়, চট্টগ্রামে করোনা মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনিও এখন করোনার আগামী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত। তিনি আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা একটা টিম ওয়ার্ক হিসেবে এতোদিন কাজ করেছি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ এবং জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমারর নাথ ও সিভিল সার্জনসহ সকলকে নিয়ে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত হচ্ছিলাম।  এখন এই টিমের গুরুত্বপূর্ণ দুজন  করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেসনে রয়েছেন এবং স্ট্রোক করেছেন জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক। তাই স্বভাবতই কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হবে, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যিনি আসবেন তিনি সবকিছু বুঝে নিতে একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি।

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনে যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়

এদিকে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন,‘আমাদের হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্ট্রোক করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। আজ সকালে তিনি ভর্তি হয়েছেন। একে একে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই আগামীতে চিকিৎসা কিভাবে পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে টেনশনে আছি। ইতিমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে একজন নিয়োগ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

গত কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেসনে থাকা চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন,‘ চট্টগ্রামের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। ইতিমধ্যে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা চালুর পর এখন অফিস আদালত চালু হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মানছে না সামাজিক দূরত্ব। তাহলে মানুষ আক্রান্ত না হয়ে কে আক্রান্ত হবে?‘

তিনি আড়্গেপ করে বলেন, মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে এতটুকু বোধও নেই। যদি থাকতো তাহলে এভাবে অবাধে চলাফেরা করতো না। আর এখন এতো বেড়ে গেছে যে, কে কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

বিভাগীয় পরিচালকের কথার সত্যতা পাওয়া যায়, ঈদের ছুটিতে সরকারের পড়্গ থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে না যাওয়ার জন্য বলা হলেও মানুষ দলবেধে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছে। আর তা ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটগণ জরিমানাও করছেন। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না এই অবাধ চলাচল।

ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে এর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। এই ল্যাবে গত এক মাস ধরে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ‘র উপরে করোনার নমুনা পরীক্ষা হতো।  বুধবার ২০৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

ল্যাবে চলছে করোনা পরীক্সা

আজ থেকে আগামী তিনদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে করোনার নমুনা পরীক্ষা। বিআইটিআইডি থেকে বলা হয়েছে, ডা. শাকিল ও টেকনোলজিস্ট মুক্তা রানী ভৌমিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ল্যাব জীবাণুমুক্ত করতে তিনদিন সময় নেয়া হয়েছে। এদিকে এই ল্যাবটি তিন দিন বন্ধ থাকায় নগরীর অপর দুই ল্যাব ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবের উপর চাপ বাড়বে।

এই চাপ পড়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা পরীক্ষার ইনচার্জ ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দীকি বলেন,‘ এতে অবশ্যই চাপ বাড়বে। আমরা আগে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি করে নমুনা পরীড়্গা করতাম, এখন আরো হয়তো ৫০টি বাড়াবো।’

করোনা চিকিৎসায় সবার আগে প্রয়োজন করোনা শনাক্তকরণ।

এই শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এতোদিন সমন্বয় করে আসছিলেন বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। এর প্রভাব পড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য প্রশাসনে সিদ্ধান্ত নেয়ায় অবশ্যই প্রভাব পড়বে।

একইসাথে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্ট্রোক করাতে তা আরো ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। তবে তারপরও এগিয়ে যেতে হবে উলেস্নখ করে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইনচার্জ ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, দেশের এই দুর্যোগে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরাও সতর্কতার সাথে কাজ করছি।

চট্টগ্রামে এপর্যন্ত ২২০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৬ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন প্রায় ২০০ জন।