চট্টগ্রামের বঞ্চনার কথা ঢাকায় তুলে ধরতে হবে

বাণিজ্যিক রাজধানী, দ্বিতীয় রাজধানী ইত্যাদির মতো বড় বড় তকমা জুড়ে দিলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে চট্টগ্রাম অন্য আটটির মতো একটি বিভাগীয় শহর ছাড়া বেশি কিছু নয়। দেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের বিশাল অবদানের কথা চট্টগ্রামবাসীরা ছাড়া অন্যরা বলেন না। বললেও তা এক ধরনের প্রবোধ দেওয়ার মতো করে বলেন। রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য বলেন। তবে এ ক্ষেত্রে দেশের সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য তিনি সত্যিকার অর্থে আন্তরিক। তবে সমস্যা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রামের সমস্যা ও প্রয়োজন তুলে ধরার মতো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তেমন নেই।
নগরের প্রসঙ্গে যদি বলি তাহলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রসঙ্গটি সবার আগে আসে। এই সিটি করপোরেশন আয়তন, লোকসংখ্যা, গুরুত্ব সবদিক দিয়ে ঢাকার পরের স্থানে হলেও এর উন্নয়ন বাজেট ঢাকার চেয়ে বহু অংশে কম। ঢাকা রাজধানী হওয়ার কারণে সব মন্ত্রণালয় থেকে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া সত্ত্বেও ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাজেট বহুলাংশে বেশি।
ঢাকার সঙ্গে তুলনা করার কোনো অভিপ্রায় থেকে বলা হচ্ছে না। প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নিমিত্তে বলা হচ্ছে মাত্র। যেমন-রোববার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরামর্শক কমিটির সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে আর্থিক সমস্যা প্রধান অন্তরায়। দায়িত্ব গ্রহণকালে সিটি করপোরেশনের ১০০০ কোটি টাকা দেনা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পরিমাণ এখন ১২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রশাসক বলেছেন, একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার যে স্বপ্ন তা পূরণে প্রধান অন্তরায় আর্থিক অসচ্ছলতা। সিটি করপোরেশনের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করার লক্ষ্যে তিনি বন্দর ও কাস্টম থেকে এক পারসেন্ট সার্ভিস চার্জ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও প্রেরণ করেছেন।
পরামর্শক কমিটির সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাই প্রশাসকের এই প্রস্তাবকে যৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করে সিটি করপোরেশনের আর্থিক দৈন্য ঘোচাতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণেরও প্রস্তাব করেছেন। পরামর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু সিটি করপোরেশনের সমস্যাই নয়, চট্টগ্রামের সমস্ত বঞ্চনা ও অবহেলার চিত্র রাজধানী ঢাকায় যথাস্থানে তুলে ধরার ওপর জোর দিয়ে প্রয়োজনে সরকারের কাছে লবিং করারও পরামর্শ দিয়েছেন।
শিল্প, সাহিত্য তথা সংস্কৃতি, ক্রীড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ-বিনোদন সব বিষয়ে অবহেলিত চট্টগ্রামের চাহিদা, জনগণের প্রয়োজনীয়তা রাজধানী ঢাকায় নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা নিতে হবে। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের দূত হিসেবে কাজ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
অতীতে আমরা দেখেছি, সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা পেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা ফিরিয়ে দেননি। তিনি যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। ফলে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক চিত্র ও সমস্যার কথা তুলে ধরা।