গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারবিধি না মানায় ঘটছে দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া :
রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ভাসমান গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। সহনীয় তাপমাত্রায় গ্যাস সিলিন্ডার রাখার নিয়ম থাকলেও অজ্ঞতার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রখর রোদে রেখেছে। যেকোন মুহূর্তে এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। এ ব্যাপারে আগেভাগে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য স্থানীয়রা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে। তবে যুবকদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে মুদির দোকানসহ পান বিড়ি সিগারেটের মতো বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা নিয়ে উখিয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে এক প্রকার অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) উখিয়া, কোর্টবাজার ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গ্যাস বিক্রির অপরাধে তাৎক্ষণিক জরিমানার মাধ্যমে সাজা প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে এধরনের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলছেন, অবৈধ ভ্রাম্যমাণ গ্যাসের দোকানগুলোতে নিয়োজিত কর্মচারীদের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় তারা ক্রেতাদের গ্যাস ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে ক্রেতারা সিলিন্ডার ক্রয়পূর্বক বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে।
গত ৭ অক্টোবর কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হয়ে ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৎমধ্যে নুর আয়েশা নামে ৬ বছরের এক কিশোরীর অবস্থা আশংকাজনক বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।
এর আগে ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বেলুন ফুলাতে গিয়ে ঘটনাস্থলে একজন মারা গেছে। আশপাশে ১৩টি ঝুঁপড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত হয়েছেন ৭/৮ জন রোহিঙ্গা। পরবর্তীতে ক্যাম্প ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান মাঝিদের ডেকে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত আর কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যেভাবে গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে তাতে যেকোন মুহূর্তে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মাঝিদের ধারণা। তারা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট এনজিও সংস্থার উচিত ছিল গ্যাস ব্যবহারবিধি সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের ধারণা দেওয়া। তারা তা না করে চাল, ডাল, তেল, লবণ, আটার মতো গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করায় একদিকে যেমন উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে ক্ষতিও হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কেউ বিক্রি করলে তা আইনত দÐনীয় অপরাধের কথাও বলা হয়েছে এবং জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ তে অভিযোগ করার কথাও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ওই নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে রশিদ না দিয়ে বাড়তি মূল্যে গ্যাস বিক্রি করছে। ফলে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ভোক্তাদের মনে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
আবুল খায়ের নামে একজন সাধারণ ক্রেতা অভিযোগ করে বলেছেন, গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য মাঝে মধ্যে কমে গেলে তা আমরা জানি না। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা আগের নিয়মে দাম আদায় করছে। এতে সাধারণ গ্রাহকেরা আর্থিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে উখিয়া গ্যাস বিক্রেতা সমিতির আহŸায়ক ইসহাক ট্রেডার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করে তিনি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। তাও সরকার নির্ধারিত দামে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়টি জেনেছি। তবে এ সংক্রান্ত অফিসিয়ালি কোন চিঠি এখনো পাইনি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।