‘গৃহহীনে গৃহ’ : সামাজিক সহায়তায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারি উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪ টি ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে দেওয়া হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই গৃহ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেবার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর এই ঘোষণার মাধ্যমে একটি সাংবিধানিক অধিকার পূর্ণতা পেলো।
বিভিন্নভাবে অব্যবহৃত খাস জমির ওপর এই ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের যে বাড়িগুলো দেওয়া হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে রেজিস্ট্রি দলিল করা হয়েছে। দলিলে তাদের দুজনের নাম ও ছবি থাকবে। প্রতিটি পরিবারকে কবুলিয়ত দলিল, নামজারি ও গৃহ প্রদানের সনদ দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে অধিকাংশ গৃহ নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আরো ১ লাখ গৃহের বরাদ্দ প্রদান করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ঘরগুলি দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে ৫৩৮টি, কক্সবাজারে ৮৬৫ ও খাগড়াছড়ি জেলার ২৬৮ পরিবার প্রথম পর্যায়ে ঘর পাচ্ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, প্রতিটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে দুই শতক জমির ওপর, নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ভূমিহীনদের ঘরের পাশে আরও দুই শতক জমির মালিকানা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর্সেনিকমুক্ত খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রতিটি গৃহে সন্নিবেশ করা হয়েছে।
জানা গেছে সমগ্র দেশে প্রায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হবে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এই ৫টি মানুষের জীবনধারণের মৌলিক উপাদান, সংবিধান অনুযায়ী এসব প্রাপ্তি জনগণের মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রকে পর্যায়ক্রমে এসব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে তার উন্নয়ন পরিকল্পনা বিন্যস্ত করতে হবে। আমাদের দেশে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, নদী ও উপকূলীয় ভাঙনে মানুষ গৃহহীন হচ্ছে। প্রতি বছর বন্যার কারণেও মানুষের ঘর বাড়ি নষ্ট হয়, সহায় সম্পদের ক্ষতি হয়। অনেকে শহরে ছোটে জীবিকাও আশ্রয়ের আশায়। এসব পরিবারকে যদি ঘর করে দেওয়া যায়, কর্মসংস্থান ও নানামুখি প্রকল্পের মাধ্যমে জীবন মান উন্নত করা যায় তবে তারা শহরে ভিড় করবে না। শহরের ওপর অভিবাসন চাপ কমবে। দেশের কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এটি একটি বড়ো সাফল্য।
একটি কল্যাণমুখি রাষ্ট্র গড়তে হলে বৈষম্যের অবসান জরুরি। সকল নাগরিক যাতে সমতাপূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকারী হতে পারে সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা সাজাতে হবে। বিপুলসংখ্যক লোকের গৃহের সংস্থান সরকারের জনকল্যাণমুখি প্রচেষ্টার একটি। শিক্ষাখাতে প্রায় শতভাগ ছেলেমেয়েকে প্রাথমিক স্কুলে পাঠানো গেছে। স্বাস্থ্যসুবিধা সহজ ও সুলভ করতে সরকারকে কর্মসূচি নিতে হবে। গ্রামের মানুষ যারা দেশের অর্থনীতি সচল রাখছে, মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনজীবিকার প্রতি সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের দিকে সরকারের গৃহায়ন কর্মসূচি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে হলে সংবিধান অনুসারে জীবনধারণের মৌলিক উপাদান নিশ্চিত করতে সরকারকে কাজ করতে হবে তবেই সমাজে বৈষম্য কমে আসবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকালে গৃহহীনে গৃহ প্রদান একটি বড়ো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে।