গার্মেন্টস শিল্প : সংকট উত্তরণে সকল পক্ষের সম্মিলিত প্রয়াস চাই

বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পোশাক শিল্পে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে সরকার, কারখানা মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা, ক্রেতা দেশগুলির সরকারের সমন্বিত প্রয়াস যেমন প্রয়োজন তেমনি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কর্মকৌশল নির্ধারণ, শ্রমিক কল্যাণ, ক্রেতা কর্তৃক পোশাকের মূল্য বাড়ানো, শ্রমিক মালিক দ্বন্দ্বহীন পরিস্থিতি প্রভৃতি বিষয়ও গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের আয়োজনে গত শনিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘কোভিড-১৯ সংকট থেকে পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার : সরবরাহ ব্যবস্থা ভিত্তিক সমাধান কি সম্ভব’। আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চীন ও ভারতের মতো বড় বাজারগুলিতে ঢুকতে পারলে বিপদ কমবে। কোভিডের বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের নেওয়া প্রণোদনার ঋণ পরিশোধের সময় বাড়াতে হবে বলে তিনি অভিমত দেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান শ্রমিকদের জন্য ক্ষুদ্র বীমা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিমা তহবিলে সরকার, ক্রেতা ও মালিকরা অর্থ দেবেন। সামাজিক বিমা চালু থাকলে দুর্যোগে শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘব হবে। আলোচনায় উত্থাপিত প্রবন্ধে গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বৈশ্বিক আমদানি কমে যায় ২৩ শতাংশ। কোভিডের কারণে ভোক্তারা কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়েছেন, অনেকে বিল আটকে রেখেছেন, তারপরও বাংলাদেশের রপ্তানিকারকগণ ক্রয়াদেশ নিতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিকের আয় কমেছে ৮ শতাংশ তবে কোভিডÑ১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, কোভিডের কারণে বিশ্ববাজারের সামগ্রিক চাহিদা ৪২ শতাংশ কমেছে।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের সংকট উত্তরণে অভিমত ও সুপারিশগুলি গুরুত্বপূর্ণ। চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এই সংকট কাটিয়ে উঠেছে। সুতরাং আমাদেরও উত্তরণ ঘটাতে সকলপক্ষীয় উদ্যোগ ও তৎপরতা প্রয়োজন। বর্তমান সংকটে সরকারের প্রণোদনা বেশ কাজ দিয়েছে। তারপরও শ্রমিক ছাঁটাই কিংবা তাদের সুযোগসুবিধা ছেঁটে ফেলা বর্তমান পরিস্থিতিতে কাম্য নয়। কোভিডের এ সময়ে শ্রমিক অসন্তোষও কম ছিলো। পোশাক শ্রমিকদের জন্য রেশনিং, সামাজিক বিমা খুবই প্রয়োজনীয়। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলি সামান্য মূল্য বাড়ালেও তা আমাদের জন্য বড়ো কিছু হবে। আমাদের তৈরি পোশাকের মান উন্নত ও বৈচিত্র্য থাকলে এবং গবেষণা ও উৎপাদনে উদ্ভাবনী শক্তির সমাবেশ ঘটাতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এ জন্য প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে হবে। কর্মপরিবেশের উন্নতি ও মজুরির নিশ্চয়তা উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে ।
বিজিএমইএর সভাপতি জানান, তহবিলের আকার যথেষ্ট না হওয়ায় অনেক কারখানা ঋণ পায়নি। আলোচনায় নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হ্যারি বারিজ জানান, রপ্তানি আদেশ বাতিল না করতে সে দেশের সরকারি অনুরোধ ক্রেতারা রক্ষা করেছে। এটি ভাল দিক। অন্যান্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ এবং আঞ্চলিক কর্মকৌশল ফল দিতে পারে।
এটা ঠিক যে বর্তমান পরিস্থিতি একটি বিশ্ব সংকট, অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যেমন দেউলিয়া হয়েছে তেমনি ক্রয়াদেশ ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আমাদের দেশের অনেক কারখানা বন্ধও হয়ে গিয়েছে। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাই উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মিলিত ভূমিকা পরিস্থিতির উত্তরণে সহায়ক হতে পারে। আমাদের পোশাকশিল্প রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে ভূমিকা রাখছে, এর সংকোচন হওয়া তাই উচিত নয়।