খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে বিশেষ নজর দিতে হবে

কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভয়াবহ মন্দায় পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্ব বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। দুর্ভিক্ষ এড়াতে সদস্য দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)।

বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তেলবাজারে দরপতনসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।  সংস্থাটি তাদের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিশ্বের ৫৫টি দেশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করেছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এই দেশগুলো জীবন না জীবিকা এ দুয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়বে। করেনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে ঘরবন্দি করে রাখা মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যেতে পারে।

এই বিশ্ব পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায় শুরু থেকে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে তাগাদা দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয় দেশের ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চাল রফতানিও করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক স্থানে কৃষক ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলেছে। বাদবাকি ধান দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে কেটে নেওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে মহামারী কোভিড-১৯ -এর কারণে প্রায় সারাদেশেই লক ডাউন চলছে।   এই অবস্থায় দেশের অনেক স্থানে দিনমজুরের অভাবে কৃষকরা ধান কাটতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও নির্দেশে সরকারদলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের অনেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকের ধান কাটায় সহযোগিতা প্রদান করেছে। এটি একটি প্রশংসাযোগ্য কাজ।

তবে এরই মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো আবির্ভূত হয়েছে সাইক্লোন ‘আম্পান’। সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন ঘূর্ণিঝড়টি ১৯ বা ২০ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। যদি তেমন কিছু ঘটে তাহলে তা শস্যের প্রভূত ক্ষতি করতে পারে। অনেক এলাকায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’।

সবকিছু বিবেচনা করে দেশের খাদ্যসঙ্কট মোকাবিলায় সরকারকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। বর্তমানে যে ধান উৎপাদন হয়েছে তা সঠিক দামে কৃষকদের কাছ থেকে কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যেন কোনোরূপ দূর্নীতি-অনিয়ম না হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী দিনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে।  এক ইঞ্চি জায়গাও অনাবাদি রাকা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কৃষি মন্ত্রণালয়কে তৎপর হতে হবে। সেসঙ্গে শুধু উৎপাদনই নয়, সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিও নজর দিতে হবে যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক ও ন্যায্য দাম পায় এবং দেশের সব স্থানে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত থাকে।