কাদা খেয়েই বাঁচে প্রজাপতি

সুপ্রভাত ডেস্ক :
প্রজাপতির সৌন্দর্যের কোনো শেষ নেই। প্রজাপ্রতি ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। এরা মাত্র ১৮ মাসের জন্য পৃথিবীতে বাঁচে। এদের সম্পর্কে রয়েছে মজার ও আকর্ষণীয় অনেক তথ্য। এরা পা দিয়ে কাঁদা খায় কিংবা আত্মরক্ষার জন্য ছদ্মবেশের কৌশল ইত্যাদি, সবমিলিয়ে সৌন্দর্যের বাইরেও পতঙ্গটির জীবন দারুণ মনোমুগ্ধকর। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক প্রজাপতি সম্পর্কিত মজার কিছু তথ্য-
অনিন্দ্য সুন্দর এই পতঙ্গগুলো খাদ্যের স্বাদ নেয় তাদের পায়ের মাধ্যমে। খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করার যে রিসেপ্টর, তা থাকে প্রজাপতির পায়ে। নারী প্রজাপতিরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে ঘুরে বেড়ায় এবং পা দিয়ে গাছের নির্দিষ্ট অংশে আঘাত করতে থাকে। এরপর ওই গাছের নিঃসরিত রস পায়ের কেমোরিসেপ্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা করে তারা। যদি তাদের নির্ধারিত মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, তাহলে সেখানে ডিম দেয় তারা।
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এজন্য, জন্মের পর প্রজাপতির লার্ভা যেন এই গাছ বা গাছের পাতা থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান পায়। এভাবেই পায়ের মাধ্যমে আদর্শ খাবার বা ডিম দেয়ার জায়গা খুঁজে বেড়ায় প্রজাপতিরা। তবে প্রকৃতিতে প্রজাপতিই একমাত্র পতঙ্গ নয়, যারা পায়ের মাধ্যমে খাবারের স্বাদ নেয়। ঝিঁঝিঁ পোকা এবং পঙ্গপালের স্বাদের রিসেপ্টরও তাদের পায়ে বিদ্যমান।
প্রজাপতির মুখে চিবানোর মতো কোনো অংশ নেই। তাই তারা শক্ত খাবার খেতে পারে না। এদের মুখে নলের মতো একটি শুঁড় রয়েছে, যা দিয়ে এরা শুধু তরল খাবার খেতে পারে। তরল খাদ্যের মধ্যে এদের মূল খাবার হলো ফুলের মধু। তবে নরম ফল বা গাছ থেকেও খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। খাবার সংগ্রহের জন্য ফুল যাচাই ও সঙ্গী নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রজাপতির এই দৃষ্টিশক্তি দারুণ ভূমিকা রাখে। প্রজাপতিরা ১০ থেকে ১২ ফুটের বেশি দূরত্বের ভালোভাবে দেখতে না পারলেও, মানুষ যে অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে পায় না, তা আবার তারা ঠিক দেখতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো, প্রজাপতি লার্ভা বা ক্যাটারপিলারদের মুখে ম্যান্ডিবলস নামক চিবানোর অংশ থাকে। যার মাধ্যমে লার্ভাগুলো শক্ত খাবার খেতে সক্ষম। যেহেতু এরা প্রজাপতির মতো বেশি দূর যেতে পারে না। তারা যেখানেই জন্মে সেখানেই বড় একটা সময় কাটাতে হয়। তাই এরা জন্মস্থান গাছের পাতা খেয়েই জীবনধারণ করে প্রাথমিক অবস্থায়।
প্রকৃতির সবচেয়ে রঙিন পতঙ্গ প্রজাপতি। নানা রঙে রাঙানো প্রজাপতির ডানা মূল সৌন্দর্যের আধার। রঙিন এই ডানাগুলো মূলত কাইটিন নামের একধরনের প্রোটিনের স্তর দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত পাতলা। এই কাইটিনের ডানার উপরে থাকে হাজার হাজার তন্তু বা আঁশ, যেখানে আলোর কারুকার্যে আমরা শত রঙে রাঙানো প্রজাপতির দেখা পাই। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই আঁশগুলো যখন ঝরে যায়, তখন শুধু থেকে যায় কাইটিনের তৈরি ডানা।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই ডানাগুলো একদম স্বচ্ছ এবং এক পাশ থেকে অন্য পাশে সহজেই দেখা যাচ্ছে। সাধারণত মিলনের সময়, খাদ্য গ্রহণ বা উড়তে গিয়ে কিছু আঁশ হারায় প্রজাপতি। তবে উড়তে এতে প্রজাপতিদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কাইটিনের তৈরি স্বচ্ছ ডানার উপরে আঁশ বা তন্তুর যে আবরণ, তা প্রজাপতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এরা শীতল রক্তের পতঙ্গ। ৬০ থেকে ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রায় এরা উড়তে পারে। প্রজাপতির বাসস্থানের তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে এদের শরীরের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করে এবং একসময় আর ডানা মেলে উড়তে পারে না। ৮২ থেকে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা প্রজাপতির জন্য আদর্শ মনে করা হয়। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।