কর্ণফুলীর তীর ইজারা নিয়ে মন্ত্রীর ক্ষোভ : দখল দূষণে নদী নাব্যতা হারাবে

প্রকৃতি, পরিবেশ, জনস্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর ইজারা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ করে দেওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রী গতকাল সার্কিট হাউসে কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষা, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কর্ণফুলী নদীর দখলÑদূষণ নিয়ে তাঁর ক্ষোভের কথা জানান। মন্ত্রী নগরজুড়ে সড়ক কাটাকাটি না করে সেবা প্রদানকারী সংস্থার সার্ভিস লাইনগুলির জন্য ‘ডাক্টলাইন’ (সার্ভিস লাইন নেয়ার জন্য রাস্তার একপাশে ডেডিকেডেট বক্স লাইন) চালুর নির্দেশ দেন। তিনি সরকারি সংস্থাগুলিকে সিটি কর্পোরেশনের পাওনা ট্যাক্স পরিশোধের জন্যও বলেন।
নদীর দুই তীর জুড়ে অন্তত ৩শ কারখানা বা শিল্প স্থাপনা রয়েছে, এগুলির বর্জ্য নদীতে পড়ে পানি দূষিত করছে। তাছাড়া, পলি এবং বর্জ্যÑআবর্জনা নদীর তলদেশ ভরাট করছে ফলে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী এবং এটি বন্দরের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
নদীর অব্যাহত দখল, তীরে নানা অবকাঠামো স্থাপন, চর জেগে ওঠাসহ নানা কারণে গত কয়েক দশকে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ সংকুচিত হয়েছে। নদীর পাড়ের জায়গা ইজারা দিয়ে সংকোচন করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। হাইকোর্টের নির্দেশনা, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের তাগিদ, চট্টগ্রামের জনগণের দাবি সত্ত্বেও নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি নদীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে কয়েকদিন চললেও দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে শুরু হবে কেউ বলতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলির রশি টানাটানি এবং পরস্পরকে দোষারোপ করার অপÑসংস্কৃতির কারণে নগরীর মানুষকে মূল্য দিতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজের অগ্রগতি অনেকটা ধীর। অনেকগুলি সংস্থা কাজ করছে বিভিন্নভাবে। এগুলির মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। মন্ত্রী সমন্বয়ের কথা বললেও বাস্তবে দেখা যায় আমলাতান্ত্রিক জট সারানো মুশকিল হয়ে পড়ে। সভায় মন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ঢাকার ৫টি নদী ও কর্ণফুলীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। ঢাকায় এ লক্ষ্যে বেশকিছু কাজ হলেও কর্ণফুলীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান দৃশ্যমান নয় অথচ এই নদীকে সবাই দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ বলে থাকেন।
চট্টগ্রাম নগরীর মানুষের আরেকটি অস্বস্তিকর অবস্থার বিষয় হলো অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুড়ি। এতে সড়কের ক্ষতি হয়, সরকারি অর্থের অপচয় হয় আর বায়ুদূষণ ও যানজটের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে ওঠে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাই রাস্তা না কেটে ঢাকনাযুক্ত লেন করার পরামর্শ দেন। স্লুইস গেট কিংবা ব্রিজÑকালভার্ট বাস্তবসম্মত না হলে জলাবদ্ধতা বাড়বে বলেও তিনি জানান। নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে ও প্রযুক্তি উৎকর্ষতা না মেনে খালের ওপর ব্রিজ কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মিরেরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ নিয়ে সমীক্ষা চলছে বলে জানান। এতে পর্যটন সুবিধা অনেক বেড়ে যাবে।
আমরা মনে করি, মন্ত্রীর এই বৈঠকের পর নগরীর উন্নয়নকাজে সমন্বয় আসবে। বিক্ষিপ্তভাবে বা সংস্থার খেয়ালখুশি মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত উপযোগিতা পাওয়া যাবে না বরং নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়বে, জনগণের অর্থের অপচয় হবে। সমন্বয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।