করোনা চিকিৎসা : ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে রোগী ভর্তি রোববার থেকে

আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাবে চট্টগ্রামবাসী, তবে চিকিৎসা খরচ রোগীকে বহন করতে হবে : সিভিল সার্জন #

নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা চিকিৎসায় রোববার থেকে যুক্ত হচ্ছে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড। চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ সম্বলিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করুক। অবশেষে ৬০ শয্যার এই হাসপাতালটি তাদের পথচলা শুরু করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাইফ্লো নজল কেনোলাসহ চীন থেকে নতুন কিছু চিকিৎসা উপকরণ যুক্ত করার কাজ শনিবার শেষ হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। আর এতে রোববার (২৮ জুন) থেকে রোগী ভর্তি করাতে পারবে হাসপাতালটি।
রোগী ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। কাল (রোববার) থেকে রোগী ভর্তি করাতে আর কোনো বাধা নেই।’
কতজন রোগী ভর্তি করানো যাবে, এই প্রশ্নের জবাবে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আইসিইউ, এইচডিও, আইসোলেশন বেডসহ আমরা ৬০ জন রোগী ভর্তি করাতে পারবো। ইতিমধ্যে চিকিৎসক নিয়োগের কার্যক্রমও শেষ হয়েছে।’
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম থাকা এই হাসপাতালটি চালু হলে চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবায় অগ্রগতি হবে জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আধুনিক উপকরণ সম্বলিত এই হাসপাতালে অক্সিজেন সিস্টেম থেকে শুরু করে সব কিছুই রয়েছে। এতে রোগীরা ভালো সেবা পাবে।’
এই হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খরচের বিষয়টি আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী যা বিল করবে তা রোগীকে পরিশোধ করতে হবে। শুধু এটাই নয়, ইউএসটিসির ক্ষেত্রেও আমরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। এছাড়া সরকার ঢাকায়ও তা চালু করেছে।’
কোভিড হাসপাতাল হিসেবে মনোনীত সকল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সব খরচ সরকারের বহন করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এই নীতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ঢাকার অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। আমরা ভর্তুকি দেয়ার পরও রোগীর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিল হাসপাতালগুলো। হাসপাতালগুলো সরকারের কাছ থেকেও টাকা নিচ্ছিল, আবার রোগীর কাছ থেকেও। তাই সরকার বাধ্য হয়ে সব ভর্তুকি বাতিল করে। এখন সব হাসপাতাল উন্মুক্ত, রোগী যে হাসপাতালে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে সেই হাসপাতালে যেতে পারবে।’
ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে খরচ কেমন হবে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আমাদের এখানে তিন ধরনের বেড রয়েছে। রোগীর অবস্থা বুঝেই আমরা বেড ও চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবো। তাই আগে থেকে খরচ কতো হতে পারে সেবিষয়ে কোনো ধারণা দেয়া সম্ভব নয়।’ এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা গরিব রোগীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। চিকিৎসা তো মানুষের অধিকার। এবিষয়টি আমরা বিবেচনায় রাখবো।’
ফয়’স লেক এলাকার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালও কোভিড হাসপাতাল হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর গত ১৪ জুন উদ্বোধন হয়। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রথমদিকে ৫০ জন রোগী পূর্ণ থাকলেও এখন তা কমে ৩২ জনে এসেছে জানিয়ে হাসপাতালটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়া হবে না জানিয়ে দেয়ার পর আমরা রোগীদের কাছ থেকে বিধি অনুযায়ী ফি আদায় করছি। করোনা চিকিৎসায় খরচ অনেক বেশি। আগে যেখানে দিনে ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগতো এখন সেখানে ৭০টি লাগছে। এছাড়া চিকিৎসকদের পেছনেও খরচ অনেক। নির্ধারিত সময় পরপর চিকিৎসকরে আইসোলেশনে পাঠাতে হয়।’
এদিকে চট্টগ্রামে এই দুই হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সব হাসপাতাল ও ক্লিনিককে করোনা রোগী ভর্তির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক ভর্তি না নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে মা ও শিশু হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতালসহ কিছু হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৬২৫ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৬৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ৯০৮ জন।