করোনায়ও থেমে নেই অপরাধীদের দৌরাত্ম্য

মোহাম্মদ রফিক :
নগরে করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও থেমে নেই অপরাধ কর্মকা-। মরণঘাতি এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশ মাঠে ব্যস্ত থাকায় অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
করোনাকালে নগরের ১৬টি থানায় মামলা দায়েরের সংখ্যা কমলেও প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, চাদাবাজি, খুন, ধর্ষণসহ জামায়াত মদদপুষ্ট একটি চক্র দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টাও করেছে। অতি সস্প্রতি বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ গ্রেফতার হয়েছেন জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি’র তিন সদস্য।
১২ মে নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে আহত অবস্থায় রকি বড়ুয়াসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ রকির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ- পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির জন্য সাঈদীপুত্র ও তারেক মনোয়ারের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারের পর রকি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব।
একই দিন নগরের রাজাখালী এলাকা থেকে ৪৭ হাজার ৮৩৫ পিস ইয়াবাসহ দুজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। জব্দ করা ইয়াবার বাজারমূল্য ২ কোটি ১৭ হাজার ৫০০ টাকা।
৮ মে রাত ৯ টার দিকে বায়েজিদ থানার মুরাদনগর এলাকায় পাওনা ৭ হাজার ৪০০ টাকা চাইতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন হন দিদারুল আলম ওরফে রিদোয়ান (৪৯) নামের এক রিকশাচালক। ঘটনার রাতে মামলার আসামি মিন্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরি, ১টি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে পুলিশ।
একইদিন (৮ মে) চান্দগাঁও থানাধীন এলাকায় সৎ বাবার হাতে ধর্ষণের শিকার হয় এক কন্যা। আগের দিন নগরে রিকশাচালক সেজে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- মো. মামুন (৩৪), হৃদয় (২০) ও বিমল ওরফে সোহেল (২৪)। এ তিনজনই নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত তিনটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নব্য জেএমবি’র তিন সদস্যকে গত ৪ মে ডিসি রোডের একটি চারতলা ভবনে থেকে তাদের গ্রেফতার করে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরিজম ইউনিট।
এসময় তাদের হেফাজত থেকে বোমা বানানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তারা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে ষোলশহর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ কর্মকর্তারা।
৩০ এপ্রিল আড্ডা দিতে বাধা দেয়ায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহি মো. হাফিজুর রহমানকে পিটিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িতদেরও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
একইদিন দুর্ধষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে পূর্ব চাঁন্দগাও এলাকায় নুরুল আক্কাস নামে এক প্রবাসীর কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজি এবং তার বাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকাইয়া আকবর বাহিনীর প্রধান আকবরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পুলিশের তালিকভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর ও তার সহযোগি পটিয়া উপজেলার কাজীপাড়ার শাজাহানের ছেলে আরিফিন নিশাত, বিবিরহাট এলাকার আলী আক্কাসের ছেলে দেলোয়ার হোসেন।
এর আগে ২৯ এপ্রিল বক্সিরহাট ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে টেরিবাজারের প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের গিরিধারী চৌধুরী (৫৮) নামে এক দোকান কর্মচারির মৃত্যু হয়। এ ঘটনা তদন্তে কোতোয়ালী থানায় কর্মরত এএসআই কামরুলের সম্পৃক্ততা পেয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
২৮ এপ্রিল বাকলিয়া থানা এলাকায় ছিনতাই হওয়া টাকা ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
এর আগের দিন ২৭ এপ্রিল বিকেলে আগ্রাবাদ পানওয়ালা পাড়ায় জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে ভাইয়ের হাতে আজগর আলী নামে আরেক ভাই খুন হন। বড়ভাই সালামত আলীর সাথে ঝগড়ার সময় বুকে ইট দিয়ে আঘাত করলে ছোট ভাই আজগর আলী নিহত হন।
২৫ এপ্রিল নগরের কর্ণফুলী থানাধীন এলাকায় সালিশি বৈঠকে আরিফুল ইসলাম দোভাষ নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে ২৩ এপ্রিল বাকলিয়া রাহাত্তারপুল বড় কবরস্থান এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে খুন করে স্বামী। এ ঘটনায় স্বামী মুছাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৪ এপ্রিল হালিশহর এলাকায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে খুন হন জামাল নামে আরেক ব্যাক্তি। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
চট্টগ্রাম সনাক-টিআইবির সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, করোনাকালেও অপরাধীরা থামছে না। মাঠে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশ ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
একই মন্তব্য করে নগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান বলেন, করোনা ঠেকাতে মাঠে ব্যস্ত পুলিশ। তবে অপরাধ দমনেও সমানভাবে সক্রিয় আছে পুলিশ। নগরে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। অপরাধের সঙ্গে যুক্তদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।