করোনার নতুন ধরণ : শঙ্কায় বিশ্ববাসী

কোভিড-১৯ ইতিমধ্যেই বিশ্বে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, সংক্রমণ ৭ কোটিরও বেশি মানুষ। করোনা মহামারি থামার কোন লক্ষণ নেই বরং করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ বিশ্ববাসীকে আতঙ্কের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। গণমাধ্যমের নানা সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ শনাক্ত হওয়ার পর দেশটির সঙ্গে সীমান্ত ও ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় ৩০টি দেশ। বলা হচ্ছে, ভাইরাসের নতুন ধরণটি মূল ধরণের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমক, তবে মানুষের অসুস্থতা আরো জটিল করছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলছেন, ভ্যাকসিন ছাড়া এই নতুন ধরণের ভাইরাস আটকানো কঠিন কেননা করোনার এই ভাইরাস দ্রুত ছড়ায়। যুক্তরাজ্য ছাড়াও নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকজনের শরীরে এই নূতন ধরণের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে বলে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে। স্পেনের কোনো ফার্ম থেকে এই ভাইরাস স্ট্রেইন ইউরোপে ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। লন্ডনের নতুন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের ৬০ শতাংশ নতুন ভাইরাসে সংক্রমিত মর্মে যুক্তরাজ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়।
এদিকে করোনার ভ্যাকসিন পেতে অস্থির হয়ে উঠেছেন বিশ্ববাসী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। ধনী দেশগুলি প্রয়োজনের বাইরে টিকা সংগ্রহ করায় ছোট ও গরিব দেশগুলি বিপদে পড়বে অথচ বিশ্বের সকল মানুষ নিরাপদ না হলে কোভিড-১৯ কিংবা নতুন ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা অসম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচিত সুলভে ও দ্রুত টিকা যাতে সকল দেশ পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া।
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, জুনের মধ্যে সাড়ে ৪ কোটি মানুষের জন্য টিকা আসবে। দুই ডোজ করে এই টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। প্রথম দফায় আগামী জানুয়ারি মাসের শেষে অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। আরো ৬ কোটি ডোজ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আসবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
করোনা প্রতিরোধে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। দোকানদার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার কথা তা হচ্ছে না। জনসমাগম হচ্ছে যত্রতত্র। এভাবে তো করোনার বিপদ এড়ানো যাবে না। মৃত্যু এবং সংক্রমণের হার বাড়ছে প্রতিদিন। হাসপাতালে রোগী বাড়ছে, অনেক হাসপাতাল আইসিইউ সংকটে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অবহেলা, অদক্ষতা পরিহার করে জনসেবায় ব্রতী হতে হবে। কোভিডের নতুন বিপদ এড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। এ জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমে। সর্বনাশ দুয়ারে এসে কড়া নাড়ছে, আমাদের হুঁশ হবে কবে?