করোনাকালে দুর্গাপূজা : পূজা উদযাপন পরিষদের ২৬ দফা নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঘনিয়ে আসছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কিন্তু বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে মহালয়া ও দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ২৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া ও ২২ অক্টোবর থেকে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর সাড়ম্বরে ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে করোনার প্রেক্ষাপটে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং মানুষকে করোনা মহামারী থেকে সুরক্ষায় সহযোগিতা করার মানসে মন্দির/দেবালয়ে আসন্ন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২৬ দফা নির্দেশনা গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করার জন্য সনাতনী সম্প্রদায়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

নির্দেশনাসমূহ হলো-

১. মহালয়া অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করতে হবে।

২. প্রতিমা তৈরি করে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি ম-পে নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. মন্দির বা পূজা ম-পে আগত দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৪. দর্শনার্থী, ভক্ত ও পুরোহিত সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং সকল দর্শনার্থীকে কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৫. পূজা মন্দির/ম-পে নারী ও পুরুষের আলাদা যাতায়াত ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনের জন্য কার্ড/ব্যান্ডধারী অধিক সংখ্যক নিজস্ব নারী-পুরুষের স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে।

৭. সন্দেহভাজন দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখুন। নারীর স্বেচ্ছা সেবকদের মাধ্যমে নারী দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখুন।

৮. আতশবাজি ও পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

৯. মন্দির/ম-পে সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে সিসি ক্যামেরা সংযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১০. ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

১১. উচ্চ শব্দের কারণে জনসাধারণের মধ্যে যাতে বিরক্তির উদ্রেক না হয় এজন্য মাইক/পিএ সেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। তবে পূজার অংশ হিসেবে ঢাক-ঢোল-কাসা এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে।

১২. কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।

১৩. কোনও অবস্থাতেই জনসমাগমের কারণে সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি যাতে উপেক্ষিত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

১৪. ম-প/মন্দির সংলগ্ন এলাকায় এবং বিসর্জন স্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১৫. মন্দির/পূজা ম-প প্রয়োজনের অতিরিক্ত দীর্ঘ সময় অবস্থান না করার নিয়ম মেনে চলুন।

১৬. সন্ধ্যার পর দর্শনার্থী প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

১৭. সকল প্রকার আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

১৮. সম্ভব হলে বাসাবাড়িতে থেকে যাতে ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারে সেজন্য ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করুন। যদি সম্ভব না হয় তাহলে স্বল্পসংখ্যক ভক্তকে নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একাধিকবার অঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১৯. যেসব ক্ষেত্রে খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেল দুর্গাপূজা করা হবে সেসব ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে পূজা করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২০. পূজার দায়িত্ব পালনরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করুন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করুন ও সংশ্লিষ্টদের মোবাইল নম্বর মন্দির প্রাঙ্গণে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখতে হবে।

২১. পূজাকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মন্দির/ম-প কেন্দ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।

২২. মন্দির/ম-প কেন্দ্রিক ফোকাল পয়েন্ট নির্বাচন করবেন এবং তার/তাদের মোবাইল নম্বর সংশ্লিষ্ট থানায় সরবরাহ করা।

২৩. কোনও প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।

২৪. অনাকাক্সিক্ষত ও যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।

২৫. প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে। ২৬. বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সকল স্তরের শাখা কমিটির আওতাধীন সকল মন্দির/ম-প কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করবেন। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিষদের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সকল স্তরের শাখা কমিটি সমূহ নিজ নিজ আওতাধীন সকল মন্দির কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করবেন এবং উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিষদের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সঙ্গে সমন্বয় সাধন করবে।

এদিকে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয়ভাবে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। এছাড়া জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিসমূহকে নিজ নিজ মনিটরিং সেল গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি অবহিত করতে বলা হয়েছে।