এমএন লারমা গ্রুপের ৬ নেতাকর্মী হত্যা: ২০ জনকে আসামি করে মামলা

সংবাদদাতা, বান্দরবান
প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে জেএসএস সন্তু লারমা সশ^স্ত্র গ্রুপের সন্ত্রাসীরা এমএন লারমা গ্রুপের ৬ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এমএন লারমা গ্রুপের বান্দরবান সাধারণ সম্পাদক উবা মং মার্মা। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে বান্দরবান সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এতে ১০ জনকে আসামি এবং আরো ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে তিনি বলেন, জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপ গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অপরদিকে জেএসএস সন্তু লারমা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করছে। তারা চাঁদাবাজি করে এবং অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তারা এখনো অস্ত্র জমা দেয়নি, চাঁদাবাজি-অপহরণ বন্ধ করেনি। কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছি। তাই প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা আমাদের ওপর হামলা করে ৬ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এদিকে নিহত ৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার সন্ধায় হাসপাতালের মর্গ থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উবামং মার্মা লাশগুলো গ্রহণ করে। এদের মধ্যে ৫ জনের লাশ খাগড়াছড়ি গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয় এবং নিহত রতন তংঞ্চগ্যার লাশ বাঘমারায় পরিবারের কাছে দেয়া হয়।
জানা গেছে, বান্দরবানে দীর্ঘ দিন ধরে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর আধিপত্য বজায় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন গ্রুপের উত্থান হওয়ার পর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আবারো দেখা দেয় অপহরণ খুন চাঁদাবাজির ঘটনা। পাহাড়ে চাঁদাবাজি অপহরণ খুন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এরা ভাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। আধিপত্য বিস্তারের জেরে এর আগেও বান্দরবানে বেশ কিছু হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে এতে জেএসএস ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মারা যান। এসব হত্যাকা-ে আওয়ামীলীগ জেএসএসকে দায়ী করলেও জেএসএস মগ লিবারেশন পার্টিকে দায়ী করে। তথাপি এমএন লারমা গ্রুপের সদস্যদের হত্যার জন্য জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপকে দায়ী করছেন সংস্কারপন্থি এমএন লারমা গ্রুপ।
বান্দরবানে এমএন লারমা গ্রুপের অস্তিত্ব না থাকলেও গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নিয়ে বান্দরবান জন সংহতি সমিতি জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর গত ৩১ মে থেকে তারা সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকায় একটি অফিস ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। গত ৭ জুলাই সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে সংগঠনের সভাপতি রতন তংঞ্চগ্যার বাসায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকালের খাবার খাওয়ার জন্য জড়ো হলে জেএসএস সন্তু লারমার স্বশস্ত্র গ্রুপ ব্রাশ ফায়ার করে এমএন লারমা গ্রুপের ৬ নেতাকর্মীকে হত্যা করে।
সংগঠনের সদস্য উহাই মং বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আমরা খাবার খাওয়ার জন্য সভাপতির বাসায় যাই এসময় দুজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ঘরে ঢুকে ব্রাশ ফায়ার করে। এসময় ওই ঘরে আমরা ১৩ জনের মত ছিলাম। গুলির শব্দ শুনে পালিয়ে যাওয়ায় আমি বেঁচে যাই। এর আগে ১৩ জুন রাতের বেলা আরো একবার আমাদের উপর গুলি ছোড়া হয় কিন্তু সেদিন আমরা বেঁচে যাই।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উবা মং মার্মা বলেন, এ হত্যাকা-টি পরিকল্পিত। আমাদের গতিবিধির উপর তারা নজর রাখছিল। সেদিন বাজার বার ছিল তারা ২০/২৫ জনের দল এসেছিল কিন্তু শুধু দুজন অস্ত্র নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ব্রাশফায়ার করে চলে যায়। আমাদের সাংগঠনিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। যে কোন সময় আমাদের ওপর হামলা হতে পারে তাই, সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, এমএন লারমা গ্রুপের ৬ নেতাকর্মী হত্যায় সাধারণ সম্পাদক উবা মং বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এতে ১০ জনকে এজাহারনামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। শীঘ্রই আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।