এখন সবচেয়ে প্রয়োজন বেশি ধৈর্য, সাহস ও সমন্বয়ের

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কত তার সঠিক তথ্য কোথাও নেই। কারণ আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করার সুযোগ আমাদের সীমিত। তবে এর মধ্যে যতগুলো পরীক্ষা হচ্ছে আর তাতে যে পরিমাণ আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা যাচ্ছে দেশে প্রচুর মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কোনো উপসর্গ ছাড়াই স্বাভাবিক অবস্থায় জীবনযাপন করছেন, সামাজিকভাবে মেলামেশা করছেন।

ঢাকার পর চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছে কভিড-১৯ এর হটস্পট। এখানে প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে তা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে চট্টগ্রামে। বিআইটিআইডির ল্যাবপ্রধান ডাক্তার শাকিল আহমেদসহ চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে আক্রান্তের তালিকায় আছেন চিকিৎসক-নার্স,  পুলিশ, সাংবাদিকসহ নানা পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। এইসব সংবাদে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যদিও গবেষকরা পূর্বে ধারণা দিয়েছিলেন যে, মে মাসের শেষের দিকে করোনা  পরিস্থিতি একেবারে চূড়ান্তের দিকে যাবে।

ইতিমধ্যে লকডাউন অনেক ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। অনেক স্থানে লকডাউন না মেনে মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর সংখ্যক মানুষ নগর ছেড়ে  গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। এই যাত্রায় তারা কোনো ধরনের সামাজিক সুরক্ষা বজায় রাখেননি। অনেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়া ঈদের কেনাকাটা করেছেন। এর ফলে করোনাভাইরাস আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে তা ছড়িয়েও পড়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করা এবং আক্রান্তের চিকিৎসা সেবা প্রদানও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকার চট্টগ্রামে আরও চারটি হাসপাতালকে কভিড-১৯ চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত করেছে। এগুলো হলো ইম্পেরিয়াল, হলি ক্রিসেন্ট, রেলওয়ে ও ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল  হাসপাতাল। নমুনা পরীক্ষা প্রদান সহজ করা এবং এর গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্র্যাকের সহায়তায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১২টি টেস্টিং বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোতে পুরোমাত্রায় কাজ শুরু হলে পরীক্ষাসুবিধা খানিকটা বৃদ্ধি পাবে।

করোনাভাইরাস বিষয়ে  শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। ভাইরাসটি বর্তমানে নতুন নতুন দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। ফলে কোন পন্থা অবলম্বন করা শ্রেয় তা অনুধাবন করা কঠিন হয়ে আছে এখনও।

কাজেই এখনও আমাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোন উপায় নেই। জীবিকার প্রয়োজনে কাজের অনুমতি মিললেও কর্মক্ষেত্র থেকে সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ গুণসম্পন্ন মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি ব্যবহারে আরও কড়াকড়ি আরোপ এবং সেইসাথে সম্ভবপর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে যেটা জরুরি তা হলো, ধৈর্য, সাহস ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা।