একুশে বইমেলাকে চট্টগ্রাম বইমেলা করার প্রস্তাব

শিশুপার্কের জন্য মাঠ চাইলেন মেয়র

চসিকের একুশে স্মারক সম্মাননা পদক পেলেন ১৬ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার নাম চট্টগ্রাম বইমেলা করার প্রস্তাব জানান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক প্রাপ্ত নাট্যজন শিশির দত্ত। তিনি বলেন চট্টগ্রামকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য এই আয়োজনের নাম পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

এ প্রস্তাবে সহমত পোষণ করে এই বইমেলাকে আন্তর্জাতিকীকরণের কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘শিশির দত্ত যে প্রস্তাব দিয়েছেন আমি সে প্রস্তাবের সাথে একমত। এই মেলার নাম বদলে দিয়ে চট্টগ্রাম বইমেলা করা হোক। এবং এই মেলার আন্তর্জাতিকীকরণ প্রয়োজন।’

গতকাল শুক্রবার সিআরবি শিরীষতলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ‘মহান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি মঞ্চে বসে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। আলাপে তিনি আমার প্রস্তাবে সম্মতিও দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে-এই বইমেলায় কলকাতার গুণীজনদের ডাকা হবে। আগরতলায় বাংলা ভাষাভাষী অনেক গুণীজন আছেন, আসামে আছেন। তাদেরকে ডাকা হবে, ঢাকা থেকে ডাকা হবে এবং তাদেরকে সম্মানিত করা হবে। আজকে অনেককে সম্মানিত করা হয়েছে। এখন যদি তাদেরকে ডেকে এনে এবং সেখানকার প্রকাশকদেরও ডেকে আনা হয়, তাহলে এই মেলা অটোমেটিক্যালি আন্তর্জাতিকীকরণ হবে।’

বাংলা ভাষাভাষীদের সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষায় যখন কোন বই প্রকাশিত হয়, সেটি একইসাথে নিউইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডেও হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি হয় না। কলকাতায় একটি বই প্রকাশিত হলে সেটি একইসাথে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে হয় না। আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই সংস্কৃতি লালন করি, একই পাখির কলতানে আমরা বড় হই। একই নদীর অববাহিকায় আমরা বসবাস করি। কিন্তু ১৯৪৭ সালে আমাদের মধ্যে যেই রাজনৈতিক সীমারেখা টানা হয়েছিল সেটি অতিক্রম করে আমাদের হৃদয়ের বন্ধন ছিন্ন না হলেও আমাদের মাঝে মানুষে মানুষে নৈকট্য বাড়ানো প্রয়োজন। সেটি বাড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করার পর ছাত্রলীগ প্রথম যেই দশ দফা দেয়, সেই দশ দফার মধ্যে অন্যতম দফা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। সেই দশ দফার ভিত্তিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তরুণ নেতা শেখ মুজিবসহ ছাত্র নেতারা জেলায় জেলায় সফর করেছিল। এই ইতিহাসগুলো অনুন্মোচিত রয়ে গিয়েছিল। আজকে সেগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালি জাতির মুক্তি নিহিত নাই।’

সভাপতির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চসিকের অমর একুশে বইমেলাকে আমি আন্তর্জাতিক বইমেলায় পরিণত করতে চাই। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রকাশনা ও বিখ্যাত লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত করতে আয়োজন করতে চাই চট্টগ্রামের এই বইমেলা। এই বইমেলার নাম চট্টগ্রাম বইমেলা রাখার প্রস্তাব এসেছে। আমাদের প্রধান অতিথিও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। আমরাও ঘোষণা দিতে চাই। চট্টগ্রাম সবসময় এগিয়ে থাকে, চট্টগ্রাম পথ দেখায়। এ প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করলাম। কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, সকলের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো। আশা করি আগামী বছর চট্টগ্রাম বইমেলাই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের শিশু-কিশোরদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। একটা শিশুপার্ক আমাদের খুব প্রয়োজন। শিশুপার্কের জন্য একটা মাঠ প্রয়োজন। আজকের প্রধান অতিথি যদি আমাদের এ চাওয়া সফল করে দেন, তাহলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে এই শিশুপার্ক গড়ে তুলবে। আমরা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করছি। সাত-আটটি ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে মাঠ তৈরি করে ফেলেছি। আমাদের শিশুদের জন্য ‘কিড জোন’-এর ব্যবস্থা করছি, উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করছি। সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যদি আমরা যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে পারি, বইয়ের নেশায় আকৃষ্ট করতে পারি তাহলে তারা মাদকের নেশা থেকে দূরে সরে আসবে।’

একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কারে যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচিত করায় জুরি বোর্ডের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মেয়র। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একুশে স্মারক সম্মাননা পদক প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শিল্প উন্নয়ন ও সমাজসেবায় মো. নাছির উদ্দিন (মরণোত্তর), চিকিৎসায় প্রফেসর ডা. মো. গোফরানুল হক, নাট্যকলায় শিশির দত্ত, সংস্কৃতিতে শ্রেয়সী রায়, শিক্ষায় প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ, সাংবাদিকতায় জসীম চৌধুরী সবুজ, ক্রীড়ায় জাকির হোসেন লুলু, স্বল্পদের্ঘ্য চলচিত্র নির্মাণ ও গবেষণায় শৈবাল চৌধুরী, লোকসাহিত্য ও গবেষণায় শামসুল আরেফীন, প্রবন্ধে শামসুদ্দিন শিশির, কবিতায় আবসার হাবীব ও ভাগ্যধন বড়ুয়া, শিশু সাহিত্যে ছড়াকার অরুণ শীল ও  শিবু কান্তি দাশকে পুরস্কৃত করা হয়।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

অনুভূতি প্রকাশ করেন নাট্যকলায় সম্মাননা পাওয়া শিশির দত্ত ও কবিতায় সম্মাননা পাওয়া আবসার হাবীব।