একটি আধুনিক বার্ন হাসপাতাল সময়ের দাবি

২০১৪ সালে ১০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে প্রস্তাবনায় ১০ শয্যার আইসিইউ ছাড়াও তিনটি অস্ত্রোপচার কক্ষ এবং অত্যাধুনিক সুযোগÑসুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে এই প্রকল্পের অর্থায়নে এগিয়ে আসে চীন সরকার। বার্ন ইউনিট গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করে চীন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার্ন ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা দিতে না পারায় অর্থায়ন থেকে সরে আসে চীন।
অথচ চট্টগ্রামে এখন শুধু ১০০ শয্যার বার্ন ইউনিটই নয়, পূর্ণাঙ্গ একটি বার্ন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে যে বার্ন ইউনিটটি রয়েছে তার সক্ষমতা মাত্র ২৬ শয্যার। তবে প্রতিদিন এখানে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এই ইউনিটে চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র ৫ জন। ২৬ শয্যার এই ইউনিটে তিন থেকে চারগুণ রোগীর সংকুলান করা খুব কঠিন। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের ফ্লোরে, বারান্দায় এমনকি সিঁড়ির পাশে স্থান দিতে হয়। আর যারা চিকিৎসা ও সেবা দান করবেন তাদের পক্ষে এত বিপুল সংখ্যক রোগীর সেবাদান কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। এই ইউনিটে আইসিইউ সংকট থাকায় গুরুতর রোগীদের বাধ্য হয়ে ঢাকায় পাঠাতে হয়।
গত শতকের ৬০ দশকে যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন এই শহরের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক লাখ। চট্টগ্রাম জেলাসহ আশেপাশে জেলায় লোকসংখ্যাও ছিল বর্তমানের চেয়ে অন্তত চারগুণ কম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগর ও জেলায় লোকসংখ্যা বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে আগুনে পোড়া মানুষের সংখ্যাও। বর্তমানে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা বেড়েছে নানা কারণে। বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রে আগুন লাগা ছাড়াও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, গ্যাসের পাইপলাইন লিকেজ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, এসি ও ফ্রিজ বিস্ফোরণ ইত্যাদি কারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে এখন অগ্নিকা- ও অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গত কারণেই চট্টগ্রামে একটি বার্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠছে।
চীন এই প্রকল্প থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জায়গার সংস্থান করতে পারেনি। বিষয়টি অদ্ভুত শোনালো কারণ এই হাসপাতাল চত্বরেই চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে সময় চট্টগ্রামের সচেতন মহলের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফৌজদারহাটের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য যদি জায়গার সংস্থান করতে পারে কর্তৃপক্ষ তাহলে একটি বার্ন ইউনিট করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানের সংকুলান কেন করা যাবে না তা প্রশ্নসাপেক্ষ বটে।
চীনের অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাকরি। কারণ সবদিক থেকে চট্টগ্রামকে বঞ্চিত করার প্রবণতা রোধ করতে হবে।