উখিয়া-টেকনাফে বিদ্যুৎ চুরির হিড়িক

নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া :
উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প ছাড়াও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে অহরহ বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটলেও দেখার কেউ নেই। ইতিপূর্বে ১৫ কেবি’র জাতীয় সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন করে ৩০ কেবি’র সঞ্চালন লাইন শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এলাকার বসতবাড়ি ছাড়াও ছোটখাট শিল্প কারখানা, গ্রামগঞ্জ, স্টেশনের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠা গ্যারেজগুলোতে বিদ্যুৎ চার্জ হচ্ছে ব্যটারিচালিত অটোরিকশার। আবার ফুটপাতের দোকান, হাটবাজারের অলিগলিতে রাতদিন লাইট জ¦লছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো হচ্ছে চোরাই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এর মাধ্যমে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়িকাড়ি টাকা। অথচ অতিরিক্ত বিলের বোঝা বইতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহককে।
সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাচালিত প্রায় ২৫ হাজার টমটম চলছে। এছাড়া আঞ্চলিক সড়ক উপসড়ক, গ্রামীণ সড়ক পথে আরো প্রায় ২৫ হাজার টমটম চলছে বলে উপজেলা টমটম চালক সমিতি সূত্র বলছে। প্রশ্ন উঠেছে এসব টমটমে ফিটিং করা ৪টি করে ব্যাটারি প্রতিরাত ১২ ঘন্টা চার্জিং করা হয়। টমটম চার্জ দেওয়ার জন্য প্রতিটি গ্রামে তৈরি করা হয়েছে চার্জিং ব্যবস্থা। পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় কর্মীর সঙ্গে যোগসাজসে অবৈধভাবে টমটমে চার্জ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে টমটম চার্জ করতে গিয়ে চার্জিংয়ের মালিক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তারপরেও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
টমটম ছাড়াও তিন চাকার রিকশাও চলছে ব্যাটারির মাধ্যমে। উখিয়া টেকনাফে প্রায় লক্ষাধিক তিন চাকার রিক্শা চলছে। এসব রিক্সা প্রতিদিন চার্জিং করা হচ্ছে।
একজন গ্রাহক আব্দুল মান্নান দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, তার বাড়িতে দুটি বাল্ব, দুটি ফ্যান একটি ফ্রিজের বিপরীতে ১২শ থেকে দেড় হাজার টাকা বিল করা হয়। অথচ অবৈধভাবে যেখানে ব্যাপক বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে সেখানে দেখেও না দেখার ভান চলছে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, উখিয়া টেকনাফের এমন কোন গ্রাম-পাড়া নেই যেখানে চার্জিংয়ের গ্যারেজ গড়ে উঠেনি। গ্যারেজের সাথে সম্পৃক্ত পল্লী বিদ্যুতের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা। অপচয় হওয়ায় এসব বিদ্যুৎ সহজে জায়েজ করার নামে তিন চারদিন পরপর গাছ ছাঁটানোর নামে সারাদিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।
একাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক জানান, যেখানে প্রশাসনের লোকজন বেশি থাকে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন। আর যেখানে সাধারণ মানুষের বসবাস সেখানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না।
উখিয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম সরওয়ার মোর্শেদ জানান, তার অধীনে প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা অনুপাতে কর্মচারীর সংখ্যা অপ্রতুল। বিকল হওয়ায় সঞ্চালন লাইন মেরামত করতে গিয়ে যেখানে অতিরিক্ত সময় অপচয় হচ্ছে সেখানে বিদ্যুৎ চুরি ঠেকানোর মতো লোকবল তাদের নেই। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ চুরি কমিয়ে আনার জন্য।