আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন আশরাফুল!

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
সবাই বলছেন, জীবনে এর চেয়ে খারাপ আর কঠিন সময় আর আসেনি। প্রাণঘাতী করোনা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। সবার মনেই করোনায় আক্রান্ত হবার শঙ্কা, মৃত্যুভয়। অনিশ্চিত জীবন। শারীরিক, মানসিক আর আর্থিক-নানা আনুষাঙ্গিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সবাই মন মরা। হাসতে ভুলে যাওয়া অবস্থা।
ব্যক্তি জীবন, সামজিক, কর্মজীবন- সব স্থবির। প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গেছে। নাগরিক জীবন থেমে আছে। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, রেস্টুরেন্ট, খেলার মাঠ, পার্ক, সিনেমা হল, নাট্যমঞ্চ সব বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে সবাই ঘরে, একরকম অস্বাভাবিক অবস্থা চারপাশে।
মোদ্দা কথা, প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে খুশির ঝিলিক হারিয়ে গেছে। এর চেয়ে খারাপ সময় আর কি হতে পারে? সবাই যখন এমন চিন্তা করছেন, এমনটা ভাবছেন, ঠিক তখন ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের ভাবনা ভিন্ন।
এ নন্দিত-নিন্দিত ক্রিকেটার মনে করেন, করোনার এই সময়টার চেয়েও খারাপ সময় তার জীবনে এসেছিল। কবে কখন ঐ খারাপ সময় এসেছিল আশরাফুলের জীবনে?
মাঠে আলো ছড়ানো মেধাবী ক্রিকেটার, দেশের ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা উইলোবাজ টেস্ট অভিষেকে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুল ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। তার মনে হয়, ঐ নিষিদ্ধ হবার পরের সময়টা ছিল এখনকার করোনাকালীন সময়ের চেয়েও খারাপ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রসিদ্ধ ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভ ‘নট আউট নোমান’-এ কথা বলতে এসে আশরাফুল জানালেন, সেই সময়টা এতটাই খারাপ, কঠিন ও দুর্বিষহ ছিল যে এক সময় তার মনে আত্মহত্যার চিন্তাও চলে এসেছিল।
তার ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিং কেলেংকারি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। রাজ্যের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন আশরাফুল। নিজেও শুরু থেকে অপরাধ স্বীকার করে দেশের মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ক্ষমাও চেয়েছেন। ঐ সময়ের নানা ঘটনা উপস্থাপন করেছেন।
তবে কাল রাতে নতুন কথা জানালেন আশরাফুল। প্রথমবারের মত তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো তিনি ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ প্রমাণের পর যখন নিষিদ্ধ হলেন, তখন তার জীবনের প্রতি আর কোন মোহ ছিল না। মনে হচ্ছিল, সবার চোখে আমি এখন চরম অপরাধী। এ জীবন থাকা আর না থাকা সমান।
কাল বৃহস্পতিবার রাতে ঐ কঠিন সময়ের প্রসঙ্গ টেনে আশরাফুল বলে ওঠেন, ‘একজন আমাকে বলছিলেন, এখন করোনার ভেতরে আমরা সবাই ঘরবন্দী। আপনার কেমন লাগছে? আমি বললাম আমার খুব আহামরি খারাপ লাগছে না। তিনি একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, বলেন কি এমন অস্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে? এতেও আপনার খুব খারাপ লাগছে না? আমি বললাম- ভাইরে, আমি আমার জীবনে করোনার চেয়েও কঠিন সময় কাটিয়েছি।’
‘যখন ম্যাচ গড়াপেটায় অভিযুক্ত হয়ে আমাকে নিষিদ্ধ করা হলো, আমি নিজে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিং করার কথা স্বীকার করে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলাম, তখনকার অবস্থা ছিল এর চেয়ে খারাপ’-যোগ করেন আশরাফুল।
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো মনে আছে কি মানসিক উৎপীড়ন ছিল সেটা। সবাই জানছে আমি অপরাধ করেছি। অন্যায় কাজ করেছি। ম্যাচ পাতিয়েছি। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি তখন সবার চোখে অপরাধী। সবাই বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করলো। অনেক কাছের মানুষও দূরে সরে গেলেন। প্রিয়জনদের কেউ কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমার প্রতিনিয়ত মনে হতো এরকম একটা অবস্থায় আমি কি করে বেঁচে থাকবো? আমি কি করে জনসম্মুখে মুখ দেখাবো? আমার পরিবারের কাছে কি বলবো? তাদের কি অবস্থা হবে? সামাজিকভাবে আমি ও আমার পরিবার যে হেয় প্রতিপন্ন হবে, এটা ঢাকবো কি করে?’
এত সব চাপ মাথায় নিতে পারছিলেন না আশরাফুল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম আন্তর্জাতিক সুপারস্টার বলেন, ‘তখন এক সময় আমার মনে হয়েছিল এ জীবন আর রেখে কি লাভ, তার চেয়ে বরং আত্মহত্যা করি। তারপর আমি হজে যাই। হজে গিয়ে আমার মন মানসিকতা পরিবর্তন ঘটে।’
খবর : জাগোনিউজ’র।