আতংকে দিন কাটছে বাঁশখালীর জেলে পাড়ার বাসিন্দাদের

     চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাঁশখালীর আহত তপন দাস-সুপ্রভাত

জায়গা দখলে উপর্যুপরি হামলা

সংবাদদাতা, বাঁশখালী

উপর্যুপরি হামলা আর তা-বে অতিষ্ঠ হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিল বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম নাপোড়ার জেলেরা। কয়েকটি অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপড়্গের নির্দেশে তদন্ত করছিল বাঁশখালী থানা পুলিশ। এই নিয়ে থানা পুলিশ কয়েকটি সালিশি বৈঠকও করে। তবুও কতিপয় ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের চোখ রাঙানি ও তাণ্ডব থেমে ছিল না অসহায় জেলে পরিবারের ওপর । গত রবিবার রাত ৯টায় বাঁশখালী থানা পুলিশ ডেকেছিল হামলাকারী ও  জেলে সম্প্রদায়ের নেতৃত্বদানকারী মৃত ক্ষুদিরাম দাসের পুত্র তপন দাসকে। তিনি থানা পুলিশকে যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে থানা থেকে বের হবার পর থানার অদূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের সামনে পৌঁছলে ওৎ পেতে থাকা দলবদ্ধ ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী তাকে ১৫মিনিট ধরে কিল ঘুষি লাথি মেরে বেহুশ করে পালিয়ে যায়। জীবনশংকায় বেহুশ হয়ে পরে থাকা তপন দাসকে উপস্থিত লোকজন বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করায়। ওখানে কান দিয়ে রক্তক্ষরণ ও প্রচণ্ড বমি হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার তানজিলা আফরিন বলেন, তপন দাস মাথায় ও ঘাড়ে প্রচ- আঘাত  পেয়েছেন।

জেলে পাড়ার অভিযোগকারী দীপংকর দাস, বাসন্তী দাস, রবি চাঁদ দাস, সাধন দাসসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘ গত ১ জুন ও ১০ জুন ওই পাড়ায় ৩০/৪০ জনের দুষ্কৃতিকারীরা প্রকাশ্যে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। প্রকাশ্যে পাড়ার অর্ধশতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে এবং পুকুরে জাল ফেলে দেড় লড়্গাধিক টাকার মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। বাধা দিতে গেলে ৬ নারী ও ২ পুরুষকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে। পারিবারিক শ্মশানের মন্দির ভেংগে দিয়েছে। হামলার পর সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীরা পথমধ্যে পাহারা বসিয়ে আহতদের চিকিৎসা করতেও যেতে বাধা দিয়েছে। কৌশলে ভিন্নপথে পালিয়ে গিয়ে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ২ জন এবং ৬ জন পেকুয়া উপজেলায় বেসরকারিভাবে চিকিৎসা নিয়েছে। থানায় মামলা করলে জায়গা-জমি ছেড়ে ভারত চলে  যেতে হবে, নচেৎ পুরো পাড়া জ্বালিয়ে প্রাণে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। দুষ্কৃতিকারীদের সশস্ত্র মহড়া এবং হুমকিতে ঘটনার ১ মাস পরও পুরম্নষরা স্বাভাবিকভাবে পাড়ায় যেতে পারছে না। ওই অভিযোগ নিয়ে গত ৪ জুলাই নাপোড়া জেলে পাড়ার বাসিন্দারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) ও বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তারা আরও অভিযোগে বলেন, জেলে পাড়াটি দুইশো বছর ধরে তাদের পূর্বপুরম্নষদের জায়গা। দীর্ঘদিন ধরে বিএস জরিপে ভুলভাবে কোনরূপ দলিল ছাড়া জায়গার খতিয়ান করে আমাদের পাড়া থেকে ২ কিলোমিটার দূরের জয়নাল আবেদীন, মীর মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, আহমদ ছফা,  মোসলেহ উদ্দিন, আনছার আলী, ছৈয়দ আহমদসহ ৬ জন ব্যক্তি আরও ২০/২৫জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের পৈত্রিক বসতভিটার ১১৮ শতক জায়গা দখলের চেষ্টা চালায়। বিষয়টি জেনে আদালতের স্মরণাপন্ন হলে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই বাঁশখালীর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত আমাদের পড়্গে রায় দেন। বিএস জরিপ ভুল বলে সিদ্বান্ত দেন। এর পর থেকে তারা নানা  হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাদের জায়গা দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। শুধু মাত্র জুন ও জুলাই মাসে বড় ৩টি সন্ত্রাসী হামলাসহ ৮ বার হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে বরম্ননা দাস(৪৮), সমিতা দাস(৫০), বেঞ্চু দাস(৪৬), দেবকী দাস(৪৫), ডেজী দাস (২৮), মঙ্গলী দাস(৪৮), ফকির চাঁদ দাস(৩৮), হরিসেন দাস(৩৫)। সর্বশেষ, গত ১২ জুলাই রবিবার রাতে থানায় পুলিশের ডাকে কাগজপত্র দিতে গেলে থানার অদূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে সন্ত্রাসীদের হামলায় তপন দাস গুরম্নতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে জীবনশংকায় ভুগছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘ নাপোড়া জেলে পাড়ার বাসিন্দারা আমার কাছে দেয়া অভিযোগ আমি থানায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচাজর্ (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার বলেন,‘ জেলে পাড়ায় আগের হামলাগুলোর ঘটনা পরস্পর মীমাংসার কথা বলে এজাহার না দেয়ায় মামলা হয়নি। গত রবিবারের রাতের ঘটনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আহতদের মাধ্যমে অবশ্যই মামলা করানো হবে। দোষীদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।’

হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বাঁশখালী শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট অনুপম বিশ্বাস বলেন,  ‘জেলে পাড়ায় উপর্যুপরি হামলা মেনে নেয়ার মত নয়। সন্ত্রাসীদের খুঁটির জোর কোথায় প্রশাসনের তা দেখা উচিত।’