আইসোলেশন সেন্টার : পশ্চিমেই আধাডজন, অন্য এলাকায় শূন্য

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন হলে চালু হয়েছে ২১০ শয্যার কোভিড আইসোলেসন সেন্টার- সুপ্রভাত

নগরীর অন্যান্য এলাকায় আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে : মেয়র আ জ ম নাছির
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা প্রয়োজন ছিল: খোরশেদ আলম সুজন #
ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবে অন্যান্য এলাকায় গড়ে উঠেনি: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর#

ভূঁইয়া নজরুল :
করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলো আইসোলেশন সেন্টার। কিন্তু নগরীর একপাশে (পশ্চিমে) আধা ডজন আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠলেও অন্য পাশগুলো খালি। অথচ নগরজুড়েই সুষমভাবে এসব আইসোলেশন সেন্টার গড়ে ওঠা দরকার।
বুধবার ১০০ শয্যার সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার কাম ফিল্ড হাসপাতাল চালু হলো নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমের শেষ প্রান্তে পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের পাশে বি কে কনভেনশন সেন্টারে। বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড নামে ১০০ শয্যার আরো একটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে। পতেঙ্গা ও হালিশহরের মধ্যবর্তী দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর এলাকার সল্টগোলায় পোশাক শ্রমিক ও স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য চালু হলো ৫০ শয্যার বিজিএমইএ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পোষ্যদের জন্য চালু করলো ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতাল, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে হালিশহর ছোটোপুলে সিটি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার এবং পোর্ট কানেকটিং রোডের প্রিন্স অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে ১০০ শয্যার ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’ গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে ৬৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে এসব এলাকায়।
নগরীর পশ্চিমের এই এলাকায় জনবসতির ঘনত্ব বেশি তাই ৬৫০ শয্যার এসব আইসোলেশন সেন্টারের পাশাপাশি ইপিজেডের ভেতরে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) চালু করছে আরো একটি আইসোলেণন সেন্টার। কিন্তু নগরীর অন্যান্য এলাকার অধিবাসীরা কোথায় যাবে?
পাহাড়তলী, অক্সিজেন, বায়েজিদ, বহদ্দারহাট, কালুরঘাট, বাকলিয়া প্রভৃতি এলাকায় এখনো কোনো আইসোলেশন সেন্টার বা ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে উঠেনি। ব্যক্তি বা সামাজিক উদ্যোগে যেমন গড়ে উঠেনি তেমনিভাবে বিভিন্ন শিল্পগ্রুপও এগিয়ে আসেনি। বহদ্দারহাট এলাকায় এন মোহাম্মদ গ্রুপ একটি আইসোলেশন সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছিল তবে এখন আর সেটি নেই বলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহি কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বহদ্দারহাট এলাকায় একটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।’
বাকলিয়া রাজাখালী এলাকায় ওয়েডিং পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ৫০ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম। সম্প্রতি এটি উদ্বোধন হলেও এখন আউটডোর সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তবে রোগী ভর্তি কার্যক্রম আগামী সপ্তাহে শুরু হতে পারে। এবিষয়ে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা ঠিক যে, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে গড়ে ওঠা আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতালগুলো নগরীর পশ্চিমে (হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায়) বেশি হয়ে গেছে। যদি পাহাড়তলী, অক্সিজেন, মোহরা ও বাকলিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে হতো তাহলে পুরো নগরবাসী সেবা পেতো। এরমধ্যে বাকলিয়ায় লাগতো দুটি, এছাড়া মোহরা ও অক্সিজেনে একটি করে হলেও সকলে সুবিধা পেতো। দেখি আমি বাকলিয়ায় ইউনিট-২ নামে আরেকটি চালু করতে পারি কিনা।’
আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল বলে জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এবং নাগরিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দেয়া খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘নগরীর কোথায় কোথায় আইসোলেশন সেন্টার বা ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলা প্রয়োজন এর একটা গাইডলাইন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিতে পারতো। আর সেই গাইড লাইন অনুসারে এসব সেন্টার গড়ে তোলা যেতো।’
তিনি আরো বলেন, পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পে যদি একটা আইসোলেশন সেন্টার করা যায় তাহলে পাহাড়তলী, কাট্টলী ও সীতাকু- এলাকার মানুষ এখানে এসে সেবা পেতো। একইভাবে অক্সিজেন এলাকায় একটি করা হলে হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, বায়েজিদ এলাকার মানুষ সেবা পেতো। মোহরা এলাকায় একটি করা হলে কালুরঘাট, রাউজান, কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী এলাকার মানুষ সুবিধা পেতো। একইভাবে বাকলিয়ায় এলাকায় দুটো করা হলে বাকলিয়ার পাশাপাশি পটিয়া ও আনোয়ারার মানুষ সেবা পেতো।
এসব আইসোলেশন সেন্টার এবং চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবিরের সাথে। তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে সেসব এলাকার অনেক রোগী কিন্তু আমাদের এখানে আসে। তবে আইসোলেশন সেন্টারগুলো হয়তো প্রাথমিক চিকিৎসার সাপোর্ট দিতে পারবে কিন্তু গুরুতর অবস্থায় তাদের হাসপাতালে আনতে হবে।’
এবিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ারের সাথে। তিনি বলেন, ‘সকল আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছে ব্যক্তি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে। পতেঙ্গা ও হালিশহর এলাকায় একসময় কোনো হাসপাতাল ছিল না, এখন সেসব এলাকার মানুষ উদ্যোগী হয়ে গড়ে তুলেছে। অন্য এলাকাগুলোতে মানুষ সেভাবে উদ্যোগী হয়নি।’
নগরীতে যেসব আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে সেগুলোতে অনেক শয্যা খালি রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আইসোলেশন সেন্টারে মানুষের আসার হার খুব কম। তারপরও নগরীর অন্যান্য এলাকায় আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’
একই বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আইসোলেশন সেন্টার শুধু চালু করলেই হবে না, সেগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী থাকতে হবে। তবেই রোগীরা সেবা পাবে।’
তবে চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারি ও বেসরকারি সকল হাসপাতাল কিন্তু নগরীর কেন্দ্রে। একই এলাকায় সকল হাসপাতাল। এতে এসব হাসপাতালের কাছের মানুষজন দ্রুত সুবিধা পেলেও অন্যান্য এলাকার মানুষ সহজে তা পাচ্ছে না। বর্তমানে করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি হাসপাতাল, ফিল্ড হাসপাতাল কাজ করছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪০৫ জন এবং এদের মধ্যে মারা গেছে ১৮৭ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ১১৩১ জন।