অরক্ষিত কাঁচাবাজার, বখাটের অভয়ারণ্য

ফাঁকা চকবাজার কাঁচাবাজারে প্রতিদিন বসছে বখাটের আড্ডা। ইনসেটে আড্ডার চেয়ার ও টেবিল-সুপ্রভাত প্রতিদিন বসে গাঁজার ও জুয়ার আসর

নিজস্ব প্রতিবেদক :
নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত চকবাজার কাঁচাবাজার এখন বখাটের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অরক্ষিত পড়ে থাকায় দ্বিতীয় তলায় দিন-রাত চলছে আড্ডা এবং তৃতীয় তলায় বসছে গাঁজার জমজমাট আসর। শুধু চকবাজার কাঁচাবাজার নয়, পার্শ্ববর্তী নাছির মার্কেট ও ডায়মন্ড মার্কেটের চিত্রও প্রায় একই। সুযোগ বুঝে বখাটেরা সাধারণ মানুষকে সর্বশান্তও করছে নেশার টাকা জোগাতে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ১৮ এপ্রিল প্যারেড মাঠে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয় চকবাজার কাঁচাবাজার। এরপর থেকে অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে বাজারটি।
স্থানীয়রা জানান, চকবাজার কাঁচাবাজার প্যারেড মাঠে স্থানান্তরের পর থেকে এটি বখাটেদের দখলে চলে গেছে। বাজার পরিচালনা কমিটি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ ও নজরদারি নেই। থানা-পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলরও নীরব। ফলে বখাটেরা বাজারসহ আশপাশের বিল্ডিংয়ে প্রতিনিয়ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় বের হওয়া নারীদের শিকার হতে হয় ইভ টিজিংয়ের।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ থানা পুলিশকে বলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এরা বেপরোয়া। সবসময় পকেটে ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।
সরেজমিন দেখা যায়, চকবাজার কাঁচাবাজারে দিনে-রাতে যে কেউ অবাধে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। সামনে ও পিছনের পথ সব খোলা। তৃতীয় তলায় ঘেরাবেড়াগুলো ভেঙে পড়ে আছে। চতুর্থ তলায় একটি রুম তালাবদ্ধ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আসে নির্মাণসামগ্রী। পার্শ্ববর্তী নাছির মার্কেটে বেশিরভাগ ব্যাচেলরদের ভাড়া বাসা। সেখানেও যে কেউ আসা-যাওয়া করতে পারে অবাধে। ডায়মন্ড মার্কেটে নীচতলায় সব দোকান, তবে বেশিরভাগই বন্ধ। ছাদে প্রবেশের গেট বন্ধ থাকলেও নাছির মার্কেট হয়ে ডায়মন্ড মার্কেটের ছাদে অবাধে আসা-যাওয়া করা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় তলায় বখাটের আড্ডা বসে। তৃতীয় তলায় প্রতিদিন বসে গাঁজা ও জুয়ার আসর। এ সময় তাদের কয়েকজন নিচে পাহারায় থাকে। অপরিচিত কেউ উঠলে সুযোগ বুঝে তাকে সর্বশান্ত করে দেয়। সম্প্রতি একজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ।
এ বিষয়ে চকবাজার কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোলায়মান সওদাগর বলেন, ‘একজন দারোয়ান আছে তিনি রাতে আসেন। দিনে কেউ থাকে না।’ আড্ডা বেড়েছে তিনি এমন অভিযোগ বহু পেয়েছেন। কিন্তু এরপর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাজারে আড্ডাসহ বিভিন্ন অপকর্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসছে। গত মাসেও একজনের মোবাইল ছিনতাই হয়েছে। প্রশাসনের কাছে বহুবার অভিযোগ করেছি। এখন বিরক্ত হয়ে আর বলি না। বিষয়টি মেয়র মহোদয়কে জানাব।’
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার আশ্বাস দেন।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মুহাম্মদ রইসুল ইসলাম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল ধরেননি।
চকবাজার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নিজাম উদ্দীন অভিযোগ অস্বীকার করে সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এরকম কোনো অভিযোগ কেউ আমাকে করেনি বা জানায়নি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের গা বাঁচাতে প্রশাসনের উপর দোষ চাপায়। আমি আপনার (প্রতিবেদকের) কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। যখন জানলাম অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’