অধিগ্রহণকৃত সওজ’র জমিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

২৯ কি.মি. জায়গা বেদখল

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপকণ্ঠে সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া কার্যালয়ের কয়েকশ গজের মধ্যে  পৌরশহরেও বেহাত হয়ে পড়েছে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জায়গা। যা অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন দুবাই প্রবাসী চকরিয়া কাহারিয়াঘোনা গ্রামের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন। বর্তমানে পৌরশহরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার ঢাকা ব্যাংকের পাশে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোটি টাকার ওই জায়গা দখলে রেখে সেখানে ওই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ‘সেভেন স্টার শপিং কমপ্লেক্স’ নামের একটি মার্কেট গড়ে তুলছেন দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন। অবশ্য সেভেন স্টার শপিং কমপ্লেক্সের ওই জায়গাটি ২০১৫ সালে অভিযান চালিয়ে অবৈধদখল উচ্ছেদও করেছিলেন কক্সবাজার সড়ক বিভাগ।

পরবর্তীতে প্রায় চারবছর পর ২০১৯ সালে ওই জায়গাটি নির্মিতব্য মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার বহুল প্রতীক্ষিত ছয়লেনের নতুন ‘মাতামুহুরী সেতু’ নির্মাণে অ্যাপ্রোচ অংশে পড়েছে। সেকারণে ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেতু বিভাগ ওই জায়গাটি অধিগ্রহণও করেছে। এমনকি মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণে পড়া ওই জায়গার আশপাশের শতাধিক দোকানপাট ও বসতবাড়িও কয়েকমাস আগে উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে অপসারণ করেছে সেতু বিভাগ। অভিযোগ উঠেছে, মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে দুবাই মঈনউদ্দিন গংয়ের দখলে থাকা জায়গাটি সেতুর অ্যাপ্রোচ অংশে অধিগ্রহণের আওতায় পড়লেও বর্তমানে সেখানে দিবারাত্রি বহুতল মার্কেটটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু চকরিয়া কার্যালয়ের কয়েকশ গজের মধ্যে জায়গা দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ অব্যাহত থাকলেও সড়ক বিভাগ দৃশ্যমান কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ২০১৫ সালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ওই জায়গাটি দখলমুক্ত করার সত্যতা নিশ্চিত করেন চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের সহকারী প্রকৌশলি (এসও) আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তফা। তিনি বলেন, বর্তমানে পৌরশহরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশন এলাকাস্থ ঢাকা ব্যাংকের পাশে যে জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ‘সেভেন স্টার শপিং কমপ্লেক্স’ মার্কেট গড়ে তোলা হচ্ছে সেটি সড়ক বিভাগের জায়গা। ২০১৫ সালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে আমরা ওই জায়গাটি দখলমুক্ত করেছিলাম।তিনি বলেন, বর্তমানে জায়গাটি আমাদের অনুকুলে নেই। যেহেতু জায়গাটি মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অ্যাপ্রোচ অংশে অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। এখন বিষয়টি দেখবেন সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান (সড়ক ও জনপথ বিভাগের ‘ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক)। তারা চাইলে যে কোন মুহুর্তে উচ্ছেদ করতে পারবে। অভিযোগ উঠেছে, সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং ক্ষেত্র-বিশেষে দখলবাজ চক্রকে সুযোগ দেয়ার কারণে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা অংশে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিপুল পরিমাণ জায়গা দিনদিন বেহাত হতে চলছে। ফলে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে দখলচেষ্টা বন্ধ হচ্ছেনা। এ অবস্থার কারণে সংকোচিত হয়ে পড়ছে মহাসড়ক। তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকাজ বাধাগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত বিপুল পরিমাণ জায়গা দখলে নিয়ে সড়কের দুই ধারে চকরিয়া অংশের প্রায় ২৯ কিলোমিটারজুড়ে কয়েকশ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি অধিগ্রহণকৃত এসব জায়গায় বহুতল ভবন থাকায় ভবিষ্যতে এই জায়গা পুনরুদ্ধার করতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। তাই চার লেনে মহাসড়ক উন্নয়নকাজ শুরু করার আগে এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জোর দাবি ওঠেছে বিভিন্ন মহলে। তা না হলে সঠিক সময়ে এসব অবৈধ স্থাপনা সরানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। অভিযোগ ওঠেছে, কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির সুযোগে চকরিয়া সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত শতকোটি টাকার জায়গা বেদখল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং, আজিজনগর থেকে খুটাখালী পর্যন্ত এবং পেকুয়ার টৈটং চকরিয়ার লালব্রিজ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে অন্তত হাজারো অবৈধ স্থাপনা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে দখলদাররা অবৈধভাবে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বসতি নির্মাণ করে ফেলেছেন। স্থানীয় সচেতন লোকজন জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত বেশির ভাগ জায়গা দখল হওয়ার সময় সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথমে সেখানে উপস্থিত হয়ে বাধা দেন। কিন্তু ক্ষেত্র-বিশেষে দখলদারেরা মোটা অংকের টাকায় সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার কারণে সেই অভিযানে ভাটা পড়ে। তখন সুযোগ বুঝে দখলদারেরা সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে।

অবশ্য সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত যেসব জায়গা বেদখল হয়ে গেছে, তাদেরকে ইতোপূর্বে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে স্থাপনা অপসারণপূর্বক জায়গা ছেড়ে দিতে।

 

এই নোটিশ পাওয়ার পরও যারা এখনো সওজের জমি ছেড়ে দেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সড়ক বিভাগের জায়গা পুনরুদ্ধার করা হবে। তবে সওজের এসব তৎপরতা লোকদেখানো এবং বেদখলে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে কর্মকর্তারা হাঁটছেন কচ্ছপ গতিতে।জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমা বলেন, ‘সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে জড়িতদের চিহ্নিত করে আমরা অনেকবার নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা নোটিশ পেয়েও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে না। যেসব এলাকায় সড়ক বিভাগের জায়গা দখল হয়ে গেছে তাদেরকে নতুন করে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপর বেদখল হওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানে যাবো।