অক্সিজেন ও অশ্মমণ্ডল

সাধন সরকার :

 

অক্সিজেন :

ছোট্ট বন্ধুরা, চলো জানা যাক ‘অক্সিজেন’ সম্পর্কে। অক্সিজেন আমাদের চারপাশের অতি পরিচিত একটি গ্যাস। মজার বিষয় হলো এই গ্যাস দেখা যায় না, এর কোনো রং নেই, কোনো স্বাদ নেই, গন্ধও নেই। তবে এই অক্সিজেন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারি না। ছোট্ট বন্ধুরা, একবার নাক-মুখ বন্ধ করে দেখতো! অক্সিজেন ছাড়া কতক্ষণ থাকতে পার? প্রতিনিয়ত আমরা বায়ু তথা আমাদের চারপাশ থেকে নিশ^াসের সাথে অক্সিজেন গ্রহণ করছি। আমাদের চারপাশের শুষ্ক বাতাসে প্রায় ২০ ভাগ অক্সিজেন থাকে, ৭৮ ভাগ থাকে আরও একটি গ্যাস নাইট্রোজেন, বাতাসে বাকি ২ ভাগ থাকে আর্গনসহ অন্যান্য গ্যাস। অক্সিজেন বায়ুম-লে (চারপাশে বায়ুর যে বিশালাকার ম-ল) গ্যাস অবস্থায় থাকলেও পানিতে অক্সিজেন মেশানো বা দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এ পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণির প্রতিনিয়ত শ^াসপ্রশ^াস নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ (সরাসরি) ও পরোক্ষভাবে (কোনো না কোনোভাবে) অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। চিন্তা করা যায়, এই এত এত অক্সিজেন কোথা থেকে আসে ? আমাদের চারপাশের গাছপালা তথা উদ্ভিদের সালোক-সংশ্লেষণের (সূর্য থেকে পাওয়া আলো শক্তি আর পরিবেশে মানুষের ছেড়ে দেওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি) সময় এই অক্সিজেন নামক উপকারী গ্যাসটি তৈরি হয়। উদ্ভিদ সালোক-সংশ্লেষণের সময় যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ঠিক সে পরিমাণ অক্সিজেন বায়ুম-লে ছেড়ে দেয়। আমাদের চারপাশের বায়ুম-লের মাত্র ২০ ভাগ অক্সিজেন হলেও বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া মানুষসহ সকল প্রাণি, উদ্ভিদ ও পানি নিজের অবস্থানে থাকতে পারে না।

অক্সিজেন ছাড়া বড়-বড় সব দালানকোঠাও ভেঙে পড়বে। কেননা বড় বড় স্থাপনার কংক্রিটের জমাট (অক্সিজেন আছে বলেই কংক্রিট জমাট বাঁধে) খুলে পড়বে। আমাদের মাথার অনেক ওপরে (অনেক অনেক ওপরে থাকার কারণে আমরা দেখতে পাই না) একটি স্তর আছে আর সেটি হলো ‘ওজোন স্তর’। এটি মূলত অক্সিজেনের তৈরি। সূর্য থেকে ক্ষতিকর রশ্মি আসে পৃথিবীতে। ‘অতি বেগুনি রশ্মি’ এর মধ্যে অন্যতম। অক্সিজেনের এই ওজোন স্তর সূর্যের খারাপ এই রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয়। একবার চিন্তা করা যাক, যদি অক্সিজেনের এই স্তর না থাকত তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের ত্বক পুড়ে যেত এবং একসময় আমরা মারা যেতাম।

অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ¦লে না। ফলে থেমে যাবে সকল দহন প্রক্রিয়া।

অক্সিজেন যদি না থাকে তাহলে মাটির উপরিভাগের শক্ত আবরণও ভেঙে পড়বে। আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ ভাগেরও বেশি রয়েছে পানি। শরীরের এই পানির  প্রায় ৮৮ ভাগই অক্সিজেন।

আমাদের শরীরের অধিকাংশ শক্তি আসে এই অক্সিজেন থেকে।

আমাদের শরীর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ লিটারের বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে।

তাই অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীর সকল প্রাণিকুলের অস্তিত্ব কল্পনা করা অসম্ভব।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা বনভূমি ধ্বংস বা গাছপালা কাটার মাধ্যমে অক্সিজেন কমিয়ে ফেলছি।

তাই বন্ধুরা, আমাদের বেশি বেশি গাছপালা লাগানো দরকার। তাহলে আমরা বেশি বেশি অক্স্রিজেন পাব।

অশ্মমণ্ডল :

বন্ধুরা, এবার আমরা জানবো আরও মজার একটি বিষয় ‘অশ্মম-ল’ সম্পর্কে। আমরা যেখানে বাস করি সেই পৃথিবীর উপরিভাগের পাতলা ও কঠিন শিলাস্তর (আমাদের মাটি বা ভূত্বক গঠনকারী একটি উপাদান) বা বহিরাবরণকে অশ্মম-ল বলে। ছোট্ট বন্ধুরা, কঠিন হয়ে গেল মনে হয়! তবে অশ্মম-ল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে চলো জেনে আসি ‘ভূত্বক’ সম্পর্কে। আমাদের ভূপৃষ্ঠে শিলার (বালি, কাঁকর, কাদা, প্রভৃতি এক একটি ভূত্বক গঠনকারী শিলা) বা পৃথিবীর পাতলা স্তরই ভূত্বক। এই ভূত্বকের পুরুত্ব বা গভীরতা (মাটির নিচের দিকে) অনেক কম, গড়ে ২০ কিলোমিটার। যার ওপর আমরা বাস করি, দাঁড়িয়ে থাকি সেই মাটি তথা ভূত্বক বিভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো অক্সিজেন ও সিলিকন (মাটির সাথে থাকা মৌল)। হয়তো জেনে থাকবে, ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে পৃথিবীকে তিনটি ম-লে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো: অশ্মম-ল, গুরুম-ল ও কেন্দ্রম-ল। এই তিনটি ম-লের মধ্যে সবার ওপরে (আমরা যে মাটিতে বাস করি) অশ্মম-ল অবস্থিত। ভূত্বক তথা ভূপৃষ্ঠ এবং ভূঅভ্যন্তরের কিছু অংশ অশ্মম-লের অন্তর্ভুক্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচের মাটির দিকে (গুরুম-লের উপরিভাগ পর্যন্ত) প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই অশ্মম-ল বিস্তৃত। অশ্মম-ল বিভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত। এর মধ্যে সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম (মাটির সাথে মিশে থাকা মৌল) প্রধান।

সুতরাং বন্ধুরা বলতে পারি, আমরা যে মাটির ওপরে বাস করছি এটাই মূলত ভূত্বক। এর পরেই রয়েছে অশ্মম-ল। ভূত্বক মূলত অশ্মম-লেরই অংশ। ভূত্বক থেকে তথা মাটির ওপর থেকে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় ততই তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। অশ্মম-লের এই স্তরে সমস্ত প্রাণিকুলের বাস।

আমরা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও শক্তি পাই এই অশ্মম-ল থেকে। ফলে শিল্পায়ন ও কৃষিকাজের জন্য এই স্তরের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। যার কারণে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দূষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্ধুরা, তাই বলা যায় ভূত্বকসহ পুরো অশ্মম-লের পরিকল্পিত ব্যবহার ছাড়া প্রাণি হিসেবে আগামীতে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে, তাই নয় কী! (চলবে…)