পাটকাঠি কুঁড়েঘরে শীতল পাটিতে শুয়ে থাকত কবিতা
চালের ফাঁক গলে কবিতার জ্যোৎস্না আসত, অথবা
কবিতা দেখত জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া চাঁদ।
যখন মনসা আর চাঁদ সওদাগরের দাপট ছিল বাঙলায়
বেহুলার বাসরে ঢুকেছিল সুতানলী সাপ,
সেই সুতানলীর বিষেও কবিতা ছিল,
লক্ষিন্দর ভেসেছিল কালের ভেলায়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বনেবাদাড়ে
জোনাকিরা কবিতা হয়ে জ্বলত, ঝিঁঝিঁপোকা গাইত কবিতা,
দূরে, বহুদূরে কোনো কোনো বিল কি পাথারে
জ্বলে উঠে নিভে যেত ভূতের বাতি, কবিতা।
মনে পড়ে? বটতলীরহাটে যে বায়োস্কোপওয়ালা বায়োস্কোপ দেখাত
তারও কবিতা ছিল-
‘আহারে বাহার দেখ, জার্মানিদের লড়াই দেখ’।
সন্ধ্যায় লোকে লোকে গমগম করত যখন হাট
কোনো কৃষক যখন কৃষাণীর চুড়ি কিনত
সেই চুড়ির শব্দেও কবিতা ছিল।
কামারের কামারশালায় তপ্ত লোহার আঘাতেও কবিতা ছিল
নৈঃশব্দের মধ্যরাতে কুঁড়েঘরের সঙ্গম শীৎকারেও কবিতা ছিল
বৃক্ষে বৃক্ষে পাখিদের সবুজ কবিতা ছিল
নদীজলে ছিল জলের কবিতা।
রাত ভোর হতে হতে, ভোর রাত হতে হতে কবিতা ছিল
সারাদিন সারারাত মাস বর্ষেও কবিতা ছিল
আমাদের বই পুথি চর্যার গানে কবিতা ছিল ।
এখন নদী জলহীন
বৃক্ষ কবিতাবিহীন,
গ্রাম ছুঁই ছুঁই শহরের হাত,
শব্দ করে জলহীন জলের প্রপাত।